অহিদ উদ্দিন মুকুল, নোয়াখালী : নোয়াখালীর সদর উপজেলার ৬নং নোয়াখালী ইউনিয়নে মামলার সূত্রিতায় দীর্ঘ ২২ বছরে নির্বাচন হয়নি।
এতে ক্ষুব্ধ ইউনিয়নবাসী ইউনিয়ন পরিষদের মূল ফটকে তালা ও ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে জুতা ঝুলিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা অতি দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে অব্যাহত সভা-সমাবেশ ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন ইউনিয়নবাসী।
সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের ২৮ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর ৬নং নোয়াখালী ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। আদালতে মামলা চলমান থাকায় বর্তমান তফসিলেও এ ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে না।
সরেজমিন নোয়াখালী ইউনিয়নে গেলে স্থানীয়রা জানায়, নোয়াখালী ইউনিয়ন ও অশ্বদিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী মাছিমপুর গ্রামের সীমানা বিরোধকে কেন্দ্র করে ২০১১ সালে অশ্বদিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য কামাল উদ্দিন খোকন বাদি হয়ে আদালতে মামলা করায় ২০১১ সালের ২ জুলাই অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও নোয়াখালী ইউনিয়নে নির্বাচন হয়নি।
ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, ২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনের পূর্বে নোয়াখালী ইউনিয়নকে দু’টি ভাগ করে ৭নং ধর্মপুর নামের নতুন একটি ইউনিয়ন গড়ে তোলা হয়। ইউনিয়ন বিভক্তির পূর্বে নোয়াখালী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৯জন ইউপি সদস্য থাকলেও ইউনিয়ন বিভক্তির পর ৩ জন ইউপি সদস্য ধর্মপুরে চলে যায় এবং ১ জন ইউপি সদস্য মারা যান। বর্তমানে ৪ জন ইউপি সদস্য, ৩ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য (অনির্বাচিত) ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিয়েই চলছে এ ইউনিয়নের কার্যক্রম। ফলে নোয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদে দেখা দিয়েছে কোরাম সংকট।
চলতি বছরে এ মামলাটি বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি হয়ে যায়। এতে চলতি তফসিলে অশ্বদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন কার্যক্রম শুরু হলেও তফসিলের পূর্ব মূহুর্তে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধর্মপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু তাহের ০৩ জন ব্যক্তির দ্বৈত ভোটারের অভিযোগে আদালতে একটি রিট করে। এতে চলতি তফসিলেও নোয়াখালী ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে না।
স্থানীয়রা আরো জানান, এর আগে ২০০০ সাল ও ২০০৪ সালে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহমান ও আবু তাহের জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ এবং সর্বশেষ আলাদতে রিট করে নির্বাচন বানচাল করেন। এতে নোয়াখালী ইউনিয়নের জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে একাধিকবার বিক্ষোভ করেছেন। চলতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিলে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে নির্বাচন বঞ্চিত নোয়াখালী ইউনিয়নের নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় স্থানীয় জনগণ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে তালা ও ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জুতা ঝুলিয়ে প্রতিবাদ প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন।
নোয়াখালী ইউনিয়নে পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল আমিন জানান, স্বাভাবিক নিয়মেই ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছিল। হঠাৎ গত ১৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে একদল দুর্বৃত্ত পরিষদের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এসময় পাহারারত চৌকিদার দেলোয়ার চিৎকার করলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আমি একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।
এবিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নুরুল ইসলাম জানান, নোয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদে তালা দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা দেওয়ার খবর পেয়েছি। থানায় জিডি করে তালা ভেঙে ফেলার জন্য চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দাপ্তরিক কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ইউপি সচিব নিয়মিত অফিস করছেন। আমাদের সাথে তার প্রশাসনিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। তবে ইউনিয়নের সাধারণ নাগরিকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখবো। এরপর এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হ
বে।