আহমাদুল্লাহ : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীস বিভাগের অধ্যাপক, জনপ্রিয় টিভি আলোচক ড. খোন্দকার আ ন ম আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর ১১ মে বুধবার সকালে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেছেন। ড. জাহাঙ্গীর ১৯৬১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের ধোপাঘাট গোবিন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম খোন্দকার আনওয়ারুজ্জামান ও মায়ের নাম বেগম লুৎফুন্নাহার।
তিনি ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদরাসা থেকে ১৯৭৩ সালে দাখিল, ১৯৭৫ সালে আলিম এবং ১৯৭৭ সালে ফাজিল ও ১৯৭৯ সালে হাদীস বিভাগ থেকে কামিল পাস করেন। তাঁর বিশেষ শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন মিয়া মুহাম্মাদ কাসিম ও বায়তুল মোকাররাম জাতীয় মসজিদের সাবেক খতীব উবায়দুল হক রহ.। এরপর তিনি সৌদি আরবের রিয়াদের বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপিঠ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাঊদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে অনার্স, ১৯৯২ সালে মাস্টার্স ও ১৯৯৮ সালে এরাবিকের ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি নেন। এসময় তিনি বর্তমান সৌদি বাদশা ও তৎকালীন রিয়াদের গভর্নর সালমানের হাত থেকে দুইবার সেরা ছাত্রের পুরস্কার গ্রহণ করেন। সৌদিতে তিনি শায়খ বিন বায, বিন উসায়মীন, আল জিবরীন ও আল ফাউজানসহ বিশ্ববরেণ্য স্কলারদের কাছ থেকে বিশেষ শিক্ষা অর্জন করেন। বর্তমান সৌদি আরবের অনেক বড় আলেম ও ইসলামী স্কলার তাঁর সহপাঠী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি উত্তর রিয়াদ ইসলামী সেন্টারে দাঈ ও অনুবাদক হিসেবে প্রায় তিন বছর কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও তিনি ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন ইসলামী বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
ডক্টর আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সৌদি আরবে শিক্ষা শেষে অনেক বড় বড় পদে চাকরির প্রস্তাব উপেক্ষা করে ইসলাম প্রচার ও সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্যে ফিরে আসেন স্বদেশে। ছাত্রজীবনেই ফুরফুরা শরীফের পীর আবদুল কাহহার সিদ্দীকির মেয়ে ফাতেমার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের সংসারে তিন মেয়ে ও এক ছেলের জন্ম হয়। দুই মেয়ে বিবাহিতা ও ছোট মেয়ে এখনো পড়াশোনা করছে। আর একমাত্র ছেলে উসামা রিয়াদের আল ইমাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন।
ডক্টর আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর দেশে এসে ইসলাম প্রচারসহ নানা সামাজিক কর্মকা-ে আত্মনিয়োগ করেন। এলক্ষে তিনি আসসুন্নাহ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। পেশায় তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক। ১৯৯৮ সালে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদীস অ্যান্ড ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৯ সালে তিনি একই বিভাগে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। পাশাপাশি তিনি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দারুস সালাম মাদরাসায় খ-কালীন শায়খুল হাদীস হিসেবে সহীহুল বোখারীর দারস দিতেন। এর বাইরে তিনি ছিলেন ওয়াজ মাহফিলের অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন আলোচক। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফর করে তিনি মানুষকে শোনাতেন শাশ্বত ইসলামের বিশুদ্ধ বাণী। বেসরকারি চ্যানেল ইসলামী টিভি, দিগন্ত টিভি, পিস টিভি, এটিএন বাংলা ও এনটিভির শীর্ষ জনপ্রিয় ইসলামী অনুষ্ঠানের আলোচক ছিলেন। বাংলা ইংরেজি ও আরবি ভাষায় সমাজ সংস্কার, গবেষণা ও শিক্ষামূলক ৫০ এর অধিক গ্রন্থের সফল রচয়িতা ছিলেন তিনি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, এহয়াউস সুনান, তরীকে বেলায়েত, হাদীসের নামে জালিয়াতি, ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ ইত্যাদি।
মরহুম আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত সদালাপী, বিনয়ী, উম্মাহর জন্য দরদী, মুখলিস, পরমত সম্মানকারী, যুগসচেতন, ভারসাম্যপূর্ণ, উম্মাহর ঐক্য ভাবনায় বিভোর, প্রাজ্ঞ ও প-িত হিসেবে সব মহলে সমাদৃত ছিলেন। দেশজুড়ে তাঁর হাজার হাজার গুণগ্রাহী ও ভক্ত রয়েছেন।
মহান রবের নিকট দু’আ করি-তিনি যেন এই মহান কর্মবীর ও আমাদের চোখে মহৎ ব্যক্তিকে আপন মাগফিরাত ও রহমতের চাদরে ঢেকে নেন। তাঁর বিকল্প এই উম্মাহকে দান করেন। তাঁর ভালো গুণগুলো
দিয়ে আমরা যেন নিজেদের সাজাতে পারি, সেই সৌভাগ্য হোক সবার।
লেখক: প্রাক্তন শিক্ষক ও ইমাম, বর্তমান প্রিচার অ্যান্ড ট্রান্সলেটর, পশ্চিম দাম্মাম ইসলামী সেন্টার সৌদি আরব।