সীমান্ত আরিফ: আগামী অর্থ বছরের বাজেটে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা। তিনি বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য যা যা করণীয় আমাদের তা করতে হবে। বাজেটে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা এবং পলিসি সাপোর্ট থাকতে হবে।
শুক্রবার রাতে সময় টিভিতে তুষার আবদুল্লাহর উপস্থাপনায় সময় সংলাপ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সায়মা হক বিদিশা বলেন, আগামী অর্থ বছরের জন্য যে বাজেট প্রণীত হচ্ছে তা হবে এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ বাজেট। আমি মনে করি, আগামী বাজেটে যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করা উচিত তা হলো বিনিয়োগ কিভাবে বাড়ানো যায়। বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া এ মুহূর্তে আমাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই। তাই বিনিয়োগের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে বিনিয়োগের হার হচ্ছে মোট জিডিপি’র ২৩ থেকে ২৪ শতাংশ। আমরা যে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চাচ্ছি তা ৭ শতাংশ বা তারও বেশি। এ ধরনের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে আমাদের বিনিয়োগের পরিমাণ যে কোনো মূল্যেই হোক ৩০ শতাংশের উপরে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট যেগুলো হবার কথা যেমন পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, প্রভৃতি বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনৈতিক চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে। বড় বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন শুরু হলে আমাদের দেশে অবকাঠামোগত যে সমস্যা আছে তার সমাধানে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে। বিনিয়োগের জন্য এ সব অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগ অনেকটাই সম্পর্কযুক্ত। উদাহরণ হিসেবে পদ্মা সেতুর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এবং হাজার হাজার টন রড লাগছে। সিমেন্ট প্রয়োজন হচ্ছে। পাথর লাগছে। পরিবহন খাতের কর্মতৎপরতা বাড়ছে। এভাবে একটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে বলেই অর্থনীতির অন্যান্য সেক্টরেও তার প্রভাব পড়ছে।
অর্থাৎ একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হলে তার বহুমুখি প্রভাব পড়বে অর্থনীতির অন্যান্য খাতে। আমি মনে করি, আগামী অর্থ বছরের বাজেটের প্রস্তাবিত মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। সরকার যখন বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে তখন তার প্রভাবে বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া মেগা প্রকল্পে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এভাবে মানুষের হাতে যে টাকা আসবে তা দেশের পুরো অর্থনীতিকে সচল করতে সহায়ক হবে। কারণ মানুষ এই প্রকল্পে কাজ করার মাধ্যমে যে টাকা আয় করবে তা বিভিন্ন প্রকার পণ্য ও সেবা ক্রয়ে ব্যয় করবে। এতে বাজারে বর্তমানে আমরা যে মন্দাবস্থা লক্ষ্য করছি তা কেটে যাবে।
তিনি আরো বলেন, অশিক্ষিত লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ ক্রমশ কমে আসছে। আগামীতে হয়তো প্রশিক্ষিত জনশক্তি ছাড়া কোনো লোক বিদেশে যেতে পারবে না। আমাদের এখন কারিগরি শিক্ষার উপর সাংঘাতিকভাবে জোর দিতে হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।
অর্থাৎ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে একজন ছাত্র বা ছাত্রী শিক্ষা জীবন শেষে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে নিতে পারে। কারিগরিভাবে প্রশিক্ষিত জনশক্তি বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া না হলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমাদের রেমিটেন্স আয়ে ভাটা পড়বে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও আমাদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
বর্তমানে দেশে প্রায় ৪০টির মতো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। প্রায় ১০০ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। লক্ষ লক্ষ ছেলে-মেয়ে এখানে পড়াশোনা করে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচুর ছেলে মেয়ে বিদেশে যাচ্ছে। বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তিতে যারা লেখাপড়া করছে বিদ
েশে তাদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।