মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ দরবেশ, পাপড়ি আর জয়নুল-তারা তিনজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। বাধার প্রাচীর ভেঙ্গে নিজেদের অদম্য ইচ্ছা আর মনোবলের জোরে তারা এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। আলোকিত জীবন গড়ার স্বপ্ন মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার এই তিন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর। তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তাদের মুখে হাসির ঝিলিক।
দরবেশ আলী উপজেলার তারাপাশা স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। নিজের হাত স্বাভাবিক না থাকায় অন্যের সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষা দেয়। দরবেশ আলী শ্রুতি লেখক একই বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র মহসিন মিয়ার সহায়তা নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল। সে ভালো ফল ফল করেছে। জিপিএ-৪.০৬ পেয়ে পাশ করেছে দরবেশ।
আরেকজন জয়নুল আবেদীন। সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়। গত ২৭ নভেম্বর উপজেলার বালাগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় সাথে থাকা একজন নিহত হলেও মারাত্মক আহত হয় সে। এরপর চিকিৎসা হলেও তার হাত ও পা সম্পূর্ণ অবশ হয়ে যায়। তার হাত ও পা অচল থাকায় উত্তরপত্রে লেখার জন্য একই বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র তানভীর হোসেনের সহযোগিতায় সে পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছে। সে জিপিএ-৩.৬৭ অর্জন করেছে।
আরেক অদম্য পাপড়ী পাল শহীদ সুদর্শন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ছিল। শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী পাপড়ি। জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী হলেও শিক্ষার প্রতি প্রবল আকর্ষণে কারণে পিছিয়ে যায়নি আলোর পথ থেকে। ডান হাত স্বাভাবিক না থাকায় কষ্ট করে নিজেই বাম হাতে লিখছে নিজের উত্তরপত্রে। দরবেশ আলী ও পাপড়ী পাল পরীক্ষা দিয়েছিল উপজেলার শহীদ সুদর্শন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। আর জয়নুল আবেদীন পরীক্ষা দেয় একই উপজেলার পোর্টিয়াস মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। প্রতিবন্ধী হলেও এসএসসিতে অন্যদের সাথে পাল্লা দিয়ে তারাও ভাল ফলাফল করে। তারা জানায়, সুন্দর জীবন গড়ার জন্য লেখাপড়ার কোন বিকল্প নেই। এজন্য তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায়। শারীরিক প্রতিবন্ধী দরবেশ আলী জানায়, তার দুটো হাতই স্বাভাবিক নয়। বাম হাতে অনেক কষ্টে স্বাক্ষর দিতে পারে। বিদ্যালয়ে লেখার সময় শিক্ষক ও সহপাঠীরা সহযোগিতা করেছিলেন। দরবেশ আলী আরো জানায়, শিক্ষকসহ পরিবারের সদস্যদের উৎসাহে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে তার জীবন আরো এগিয়ে যাবে-এমন প্রত্যাশা তার।
তারাপাশা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রহিম খান, সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন কুমার দাশ এবং শহীদ সুদর্শণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেন্দ্র সচিব মো. আব্দুল ওয়াহিদ জানান, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভাল ফলাফলের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম এবং তারা আমাদের আশা পূরণ করেছে। দরবেশ ও জয়নুল নিজেরা লিখতে না পারায় ৮ম শ্রেণীর ২ জন শিক্ষার্থীর সহযেগিতায় পরীক্ষা দিয়েছিল।