সীমান্ত আরিফ: কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন নামে একটি নতুন আইন হচ্ছে। এই আইনের খসড়ায় ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমি উন্নয়ন, ভূমি ব্যবহার ও কৃষিজমি সুরক্ষাসহ ভূমি-সংক্রান্ত বিষয়াদি থাকবে।
বন ও ভূমির সাথে এই সম্পর্কের কারণে আদিবাসীরা বন ও ভূমিকে ও তার সম্পদের যতœ নেয়া তাদের পবিত্র দায়িত্ব মনে করে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক আমলা ড. এম. এ মোমেন। শনিবার রাতে সময় টিভিতে তুষার আবদুল্লাহ উপস্থাপনায় ‘সময় সময় সংলাপ’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এম. এ মোমেন বলেন, আদিবাসীদের চিরাচরিত ভূমি অধিকারের মূল ভিত্তি হচ্ছে বন ও ভূমির উপর তাদের সমষ্টিগত মালিকানা। এই পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ ও জনমুখী। আদিবাসী ভূখ-ের আওতাধীন সমস্ত জমিজমা এবং বনভূমি ও বনজ সম্পদ আদিবাসীদের সামাজিক সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় এই সম্পদ এলাকাবাসী একাধারে যৌথ ও ব্যক্তিগতভাবে ভোগদখল করে থাকে।
ভূমি সংক্রান্ত আইনের বিভ্ন্নি দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনে কিছু বিষয় আছে যা দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, নারী অধিকারেরও পরিপন্থি। এসব সংশোধন না করলে মধ্য আয়ের দেশের যে স্বপ্ন মানুষ দেখছে, তা পূরণ দুরূহ হবে।
“ভূমিহীনদের খাস জমি পাওয়ার কথা থাকলেও তারা পায় না। আদিবাসীদের গ্রামে রাস্তা পাকা হয় না। যারা প্রভাবশালী তাদের গ্রামে রাস্তা পাকা হয়।”
“দেশে যতদিন পর্যন্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান না করা যাবে, ততদিন পর্যন্ত যত আইন সংস্কার করেন, তা বাস্তবায়িত করা যাবে না।”
তিনি আরো বলেন, এলাকায় অবস্থিত বনভূমি ও বনজ সম্পদ গৃহস্থালির প্রয়োজনে যে কেউ আহরণ ও ব্যবহার করতে পারে। অপরদিকে কোন একটা জমিতে বা পাহাড়ে কেউ একবার জুম বা অন্য কোন কিছু চাষ করলে উক্ত জমির উপর ঐ ভোগদখলকারীর ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া কেউ চাষ বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে দখল করতে পারে না এটাই হচ্ছে যুগ যুগ প্রচলিত প্রথাগত নিয়ম। এই নিয়ম ভঙ্গ করলে দেশে প্রচলিত দন্ডনীয় অপরাধের মতো আইন লক্সঘনের সামিল বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। ফলে এর ব্যতিক্রম কেউ করে না বা ভঙ্গ করার প্রশ্নই উঠে না এবং জায়গা-জমির বন্দোবস্তীকরণের প্রয়োজনও পড়ে না। আজকের যুগে দেশে প্রচলিত বন্দোবস্তীকরণের যে জটিল আইনানুগ ব্যবস্থাপনায় চলছে তা আদিবাসীদের সমাজে ভূমি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তো নয়ই, উপরন্তু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি সম্পর্কে ধারণার সাথে সম্পূর্ণভাবে বিরোধাত্মক বটে।
‘মোগল আমলে ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন ছিল। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ শাসনামলে প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে ভূমির ব্যবস্থাপনা করা হতো। কিন্তু আমাদের দেশটি জনবহুল হয়ে গেছে। ভূমি ব্যবহারে কোনো শৃক্সখলা নেই। কৃষিজমিতে শিল্প এলাকা গড়ে তোলা হচ্ছে। দেশের মূল ভূখ-ে কৃষিজমি কমে আসছে। তবে প্রাকৃতিকভাবে চর জেগে ওঠার কারণে আমরা কিছু জমি পাচ্ছি। ফলে আমাদের ভূমি ব্যবস্থাপনার নতুন আইনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।’ তিনি জানান, এই নতুন আইনের খসড়া তৈরির কাজ চলছে। সেটি এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।