আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ব্যক্তিগত আকাশযান প্রায় প্রতিটি মানুষের স্বপ্নের বিষয়। মানুষের এই স্বপ্ন নিয়েই কাজ করছে জামার্নির প্রতিষ্ঠান লিলিয়াম এভিয়েশন। তারা একটি ব্যাটারি চালিত স্বল্প পাল্লার আকাশযান উন্নয়নে কাজ করছে অনেকদিন থেকে। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের স্বপ্নের আকাশযানের নাম দিয়েছে লিলিয়াম জেট, যা বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর ফ্লাইং কারের ধারণাকে পূরণ করবে।
টিম লিলিয়াম দেখেছে ব্যক্তিগত আকাশযাত্রার জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা বিমানবন্দর। যা থাকে আবাসস্থল থেকে দূরে এবং খরুচে। ফলে বিমানবন্দরে যাওয়া আসা একটা ঝামেলার ব্যাপার হয়ে দাড়াঁয়। টিম লিলিয়াম এমন একটা বিমানপোতের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে যা খাড়াভাবে উড়তে ও নামতে পারবে। এর জন্য বড় কেবান কমপ্লেক্সের দরকার পড়বে না। তাদের মূল প্রতিশ্রুতি হলো বিমানবন্দর ছাড়া একটি উড়ানের ব্যবস্থা করা। লিলিয়াম জেটের জন্য দরকার পড়বে ২২৫ বর্গমিটারের একটি উঠান। একরাত ব্যাটারি চার্জ করে নিলে লিলিয়াম জেট যেতে পাড়বে ৩১০ মাইল বা ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব। চলার গতি সর্বোচ্চ ৪০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। উড়বে ৩ কিলোমিটার ওপর দিয়ে। এই বিমানপোতের ব্যাটারি চার্জ করা যাবে ঘরের সাধারণ বিদ্যুৎ লাইন দিয়েই।
কার্যকারিতার বিচারে লিলিয়াম জেট হেলিকপ্টারের মতই। তবে রোটর চালিত আকাশযানের চেয়ে এর কিছু বাড়তি সুবিধা আছে। যেমন, লিলিয়াম জেটের ফ্যান থাকবে ঢাকনার নীচে। এর আওয়াজ নেই বললেই চলে, এবং পরিচ্ছন্ন। জ্বালানি চালিত পিস্টন ইঞ্জিনের চেয়ে এই আকাশযান অনেক ভালো। হেলিকপ্টারের দেখভাল খুব খরুচে। লাগে উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। আর মাঝপথে ইঞ্জিন থেমে গেলে হেলিকপ্টার তো মরণ-যন্ত্র। বিপরীতে, লিলিয়াম জেটে রয়েছে ৩৬টি ছোট ছোট ফ্যান-মোটর। প্রতি ডানায় আছে ১২টি করে, আর আর ১২টি থাকছে নাক থেকে শরীর পর্যন্ত। ৩৬টি মোটর এক সঙ্গে ৪৩৫ অশ্বশক্তর যোগান দেবে। পুরো ব্যবস্থাটিই এমনভাবে সংযোজন করা হচ্ছে যে, এক বা একাধিক ফ্যান-মোটর অকেজো হলেও জরুরি অবতরণের দরকার পড়বে না।
হেলিকপ্টার চালানোর জন্য দরকার পড়ে উচ্চ প্রশিক্ষণ। গড়পরতায় খরচ পড়ে ৩০ হাজার পাউন্ড। আর দরকার পড়ে কয়েকশ ঘণ্টার উড্ডয়ন অভিজ্ঞতার। লিরিয়াম জেট চালানোর লাইসেন্স পেতে লাগবে ২০-৩০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ। খরচ পড়বে ৬ হাজার পাইন্ডের মতো। আর এই আকাশযানের উড্ডয়ন ও অবতরণ অনেকটা ড্রোনের মতো।
এই স্বপ্নের আকাশযানের কিছু অসুবিধাও আছে। এই বিমানপোতের চলাচল অনুমতি মিলবে পরিষ্কার আকাশে, দিনের বেলায় এবং আকাশে যদি অন্য কোন আকাশযান না থাকে তবেই। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে লিলিয়াম জেটের মডেল তৈরি করতে পারবে বলে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাস। ভবিষ্যতের বাহন আসছে, একটি ২২৫ বর্গমিটারের যায়গা প্রস্তুত রাখুন। বিবিসি।