//খুঁজছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা//সাতদিনের রিমান্ডে আসলাম চৌধুরী//
ডেস্ক রিপোর্ট : ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
এদিকে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদি লন্ডনে ‘মিস্টার রহমান’ নামে একজনের সঙ্গে বৈঠকের কথা তিনবার বলেছেন। কে এই ‘মিস্টার রহমান’? এই বিষয়টি খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক গোলাম রব্বানী ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, আসামি আসলাম চৌধুরী গত ৫ থেকে ৯ মার্চ বাংলাদেশের সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের কাজে ভারতে যান। ভারতে থাকার সময় বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বহির্ভূত রাষ্ট্র ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই সংক্রান্ত সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
আসামি বর্তমান নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের নীলনকশা করেন। এই নীলনকশা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাতের জন্য সন্ত্রাস, নাশকতা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এটি দেশের অখ-তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি ও রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং এর জন্য সহযোগিতা চান।
এদিকে গ্রেফতার করার পর আসলাম চৌধুরীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে তিনি বৈঠকের কথা স্বীকার করেন। তবে এর নেপথ্যে কেউ রয়েছে কী না সেই বিষয়ে খোলাসা করে কিছু বলেননি। এর বাইরে তার বিরুদ্ধে নাশকতা, গাড়িতে আগুন দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ৩৫টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে সীতাকুন্ডে গরুর গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়। আলোচিত এই মামলার আসামি আসলাম চৌধুরী। কেবল সীতাকুন্ড থানাতেই তার বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা রয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপি-জোট সরকারের আমলেই এই আসলাম চৌধুরীর উত্থান। সেই সময়ে সীতাকুন্ডে দুটি শিপ-ইয়ার্ড এবং একটি তেল শোধনাগার দখল করে নেন আসলাম চৌধুরী। এসব শিপ-ইয়ার্ডে গভীর রাতে স্পিডবোটে করে টেকনাফ থেকে ইয়াবা এবং অস্ত্রের চালান আসতো বলে জানা গেছে। এসবই তার টাকা আয়ের অন্যতম উৎস ছিলো বলে মনে করা হয়।
আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্যসহ কয়েকজন নেতার শেল্টারে বর্তমান সরকারের আমলেও তিনি সুবিধা পেয়ে আসছিলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া পুলিশের একটি অংশও তাকে সহায়তা করতো। এদের প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা দিতেন আসলাম চৌধুরী। ফলে সব মামলায় জামিন না থাকলেও তিনি বীরদর্পে ঘুরে বেড়াতেন। চলতি বছরে প্রথম দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় ফৌজদারহাটে একটি কেন্দ্র দখল করার জন্য দুর্র্ধষ সন্ত্রাসী রোকন মেম্বারকে দায়িত্ব দেন আসলাম চৌধুরী। রোকন মেম্বার নির্বাচনের দুদিন আগে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এসময় আইন-শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয় রোকন মেম্বার। তিনি স্বীকার করেন, এসব অস্ত্রের সরবরাহকারী আসলাম চৌধুরী।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর চট্টগ্রামের এই নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয় সহিংসতার মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে। সেই সময়ে প্রত্যেক গাড়িতে আগুন দিলে প্রতিজন পেতেন ১০ হাজার টাকা। সহিংসত
ার সময় গ্রেফতারকৃত একাধিক লোক এসবের নেপথ্যে তার জড়িত থাকার কথা বলেছেন। সহিংসতায় সফল হওয়ার পুরস্কার স্বরূপ দিয়ে পেয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের পদ।
গোয়েন্দারা একটা বিষয়ে নিশ্চিত এই ঘটনার বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কোনো কোনো নেতার হাত থাকতে পারে। কেননা তার মতো একজন নেতার পক্ষে ভারতে গিয়ে ইসরাইলের নেতার সঙ্গে বৈঠক করা সম্ভব নয়।
এদিকে ভারতে সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রের বৈঠকে বাংলাদেশি একজন সাংবাদিক ছিলেন বলে নাম আসছে ঘুরেফিরে। ওই সাংবাদিকের নামের প্রথম অক্ষর ‘স’। তিনি বন্ধ হওয়া একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক ছিলেন। ইতোমধ্যে ওই সাংবাদিকের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে।
গতকাল বিবিসি বাংলার এক সংবাদে বলা হয়, মেন্দি এন সাফাদিকে গুপ্তচর অভিহিত করায় ভারতের ওই আয়োজকরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। অথচ মেন্দি এন সাফাদি ফেসবুক স্টাটাসে এবং জেরুজালেমভিত্তিক একটি অনলাইনে আসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশে মোসাদের এজেন্ট সিপান কুমার বসুর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হওয়ার কথা এবং বৈঠকের বিভিন্ন দলীয় আলোকচিত্র আপলোড করেছেন। সেখানে তিনি সংখ্যালঘুদের ভিডিও ফুটেজ দেখে ক্ষিপ্ত হন। বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে ইসরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা, বাংলাদেশে ইসরায়েলের দূতাবাস চালু করাসহ নানা বিষয়ের কথা তার দেয়া স্টাটাসে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান সরকারকে ওই বৈঠকে ব্রাদার হুড সরকার বলেও স্টাটাসে উল্লেখ করা হয়েছে। ইত্তেফাক