সীমান্ত আরিফ: তিনি যতই অপরাধ করুক না কেন তিনি তো শিক্ষক! তিনি শুধু মানুষ নন, মানুষ গড়ার কারিগর। দানবের নির্দেশে এই মানুষ তৈরির কারিগর দুই হাতে নিজের কান ধরে ‘উঠবস’ করছেন। অপমান-যন্ত্রণায় ক্লান্ত মানুষটি আর পারছেন না। কান ধরে বসতে গিয়ে পড়ে গেলেন। মানুষের মতো কয়েকজন তাকে ধরে তুললেন। দানবের নির্দেশে সামনের মানুষের মত প্রাণিদের কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হলেন।
ভিডিওটির এই পর্যন্ত দেখে, স্থির থাকতে পারছি না। ভেতরটা ভেঙেচুরে দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। সহ্য করতে পারছি না, মানতে পারছি না। মনে হচ্ছে এই মানুষটিই তো আমার পিতা, যাকে কান ধরে উঠবস করানো হচ্ছে। এই মানুষটিই তো আমার শিক্ষক, যাকে আমি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি। যে বৃদ্ধ-দরিদ্র শিক্ষককে ৫০০ টাকা দিয়ে সহায়তা করতে পারিনি বলে বুকের ভেতর কষ্ট হয়। এই তো আমার সেই শিক্ষক।
সোমবার রাতে রাহুল রাহার উপস্থাপনায় চ্যালেন টোয়েন্টিফোরে মুক্তবাক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক মাহফুজউল্লাহ।
মাহফুজউল্লাহ বলেন, এই মানুষটিই তো বাংলাদেশ। যাকে দানব এভাবে কান ধরে ‘উঠবস’ করালো। আমরা এই সমাজে বাস করি, মানুষ চেনে-জানে। আমরা কিছুই করতে পারলাম না মানুষটির জন্যে! বাংলাদেশের জন্মের পেছনে নিশ্চয়ই অবদান আছে এই মানুষটির, তার পরিবারের। দেশের জন্যে প্রাণ দিয়েছেন কোনো না কোনো সদস্য। অনেকে হয়ত পরবর্তীতে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। হয়ত তিনি যাননি মা -মাটির মায়ায়!
মাহফুজুল্লাহ বলেন, দুর্নীতি- অনৈতিকতা- অসততা- লাম্পট্যের প্রতীক স্বৈরাচার এরশাদ। এই নীল দানবেরা ছিল স্বৈরাচারের লাঠিয়াল। দানবদের বিরুদ্ধে একদিন আমরা সংগ্রাম করেছিলাম। কলেজ জীবনের রঙিন দিনে দানবের কাঁদানে গ্যাসের যন্ত্রণায় চোখ জ্বলেছিল- ভিজেছিল। দানবদের আমরা পরাজিত করেছিলাম। পতন ঘটিয়েছিলাম। প্রাণ দিতে হয়েছিল নূর হোসেন, সেলিম-দেলোয়ার, বসুনিয়া, দীপালী, জাফর-জয়নালদের। স্বৈরাচারের সেই দানব আবার ফিরে এসেছে। নারায়ণগঞ্জে চলছে তাদের রামরাজত্ব। তারা ত্বকীদের হত্যা করে, শিক্ষককে কান ধরে ‘উঠবস’ করায়। বাংলাদেশকে অসম্মান করে, অপমান করে।
তিনি বলেন, তখনও শিক্ষক-সাংবাদিক-কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবীদের বড় একটা অংশ এরশাদের থেকে অর্থ-সম্পদ-প্লট নিয়েছে। আমরা জেনেও তাদের উপর ভরসা করেছি, কথা শুনেছি-মেনেছি। আমাদের প্রজন্ম আজ তার মাসুল দিচ্ছে। আজ আমাদের সামনে মানুষ নেই, বড় মানুষ নেই- যাদের শ্রদ্ধা করা যায়, ভালোবাসা যায়। যারা আছেন, তারা মানুষের মতো। তারা আমার আপনার চেয়ে ছোট, অনেক ছোট। যারা পদ-পদবি সম্পদের কাছে নিজেদের বিক্রি করে দিয়েছে। তারা রাতকে দিন, আর দিনকে রাত বলার নীতিতে বিশ্বাস করে। মিথ্যার সঙ্গে আপোষ করে, মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরে। তারা আলু-পটলের মতো নিজের কলমও বিক্রি করে দিয়েছে। বিক্রি করে দিয়েছে চোখের মনি। লজ্জা তাদের কাছে ঘেঁষতেও ভয় করে।
সারাজীবন শিক্ষাদানের পর, একজন শিক্ষকের এই প্রতিদান! এই আমাদের রাষ্ট্র, এই আমাদের সমাজ!! ওই শিক্ষক তো তেমন কিছুই বলেননি। পুরোটাই প্রোপাগান্ডা। তারপরও যদি ধরেও নেই, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্যি। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের আইন ভঙ্গ করে থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনা যায়। তা করা যায় যদি রাষ্ট্রে আইনের শাসন থাকে।