[মেন্দি সাফাদি, আঞ্চলিক সহযোগিতা বিষয়ক উপমন্ত্রী আইয়ুব কারের সিনিয়র উপদেষ্টা। তিনি ব্যাখ্যা করেছেনে বাংলাদেশে মুসলিম ব্রাদারহুডের (তার বর্ণনা মতে যা আমাদের বোধগম্য নয়- সম্পাদক) একনায়কতন্ত্র চালু হ্ওয়ার পর কী করে দেশটিতে গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন। এছাড়া, আলোচনা করেছেন কী করে দক্ষিণ এশিয়ায় ইসরায়েলকে তুলে ধরছেন।]
ইসরায়েলের আঞ্চলিক সহযোগিতা বিষয়ক উপমন্ত্রী আইয়ুব কারের একজন সিনিয়র উপদেষ্টা মেন্দি সাফাদি। তিনি জেরুজালেম অনলাইনকে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাতকারটি প্রকাশিত হয় ২৯ জুন ২০১৫ তারিখে। এসময় তিনি আরো জানান, ভারতের কলকাতা থেকে এইমাত্র ফিরলেন তিনি। সে সময় তিনি আরো জানান, সেখানে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পূনপ্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন তিনি। ২০০৬ সালে দেশটিতে মুসলিম ব্রাদারহুড ক্ষমতা দখলের পর থেকেই তিনি কাজ করছেন। সাফাদি বলেন, যেসব দেশে একনায়কতন্ত্র চলছে, সে সব দেশের জনগণ তাদের জন্য কাজ করতে প্রায়শই তাকে (সাফাদিকে) অনুরোধ করেন। অনুরোধ করেন সারা দুনিয়ার আইনসভাগুলোতে লবিং করার জন্য। ২০০৬ সালে মুসলিম ব্রাদারহুড বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে প্রতিষ্ঠা করে একনায়কতন্ত্র। ২০১৪ সালে দেশটিতে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, আর ব্রাদারহুড তা ছিনতাই করে।
সাফাদি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের বিরোধী পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ লোকজন ইউরোপে চলে যান। কারণ, তাদের পক্ষে দেশটিতে বসবাস করা বিপদ জনক হয়ে পড়ে। সাফাদি বলেন, তারা একটা নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে প্রচারণার জন্য আমাকে অনুরোধ করেন, যে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে জাতিসংঘ। এ কারণে তারা আমাকে ভারতে আমন্ত্রণ জানায়, কেননা একজন ইসরায়েলি হিসেবে আমি বাংলাদেশে যেতে পারবো না। আমি এটা করছি আমার ব্যক্তিগত কাজ হিসেবে। একজন আন্তর্জাতিক লবিস্ট হিসেবে। এটা করছি তাদের জন্য একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে এবং দেশটিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে। তারা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হলে, ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব করবে।
সাফাদি বলেন, বাংলাদেশ কেবল মুসলিম ব্রাদারহুড বিরোধী বাঙ্গালি গণতান্ত্রিক শক্তির জন্যই বিপদজনক হয়ে ওঠেনি। বাংলাদেশের সকল হিন্দু জনগোষ্ঠি বিপদের মধ্যে রয়েছে। মুসলিম ব্রাদারহুড চায় তারা মুসলিম হয়ে যাক। ২০০৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে বহু হিন্দুকে খুন করা হয়েছে অথবা গুম করা হয়েছে। বাংলাদেশে হিন্দুরা মোট জনগোষ্ঠির ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। বাস্তবতা হচ্ছে মুসলিমদের ভয়ে তাদের বেশিরভাগই এখন ভারতের কলকাতা চলে যাচ্ছে।
আমস্টারডাম ভিত্তিক গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে হিন্দুদের আক্রমনের লক্ষ্যে পরিনত করা হয় সাম্প্রদায়িক মতনৈক্য, জমি বিরোধ বা অন্য কোন বিরোধের কারণে। হিন্দুদের শারিরীক আক্রমন করা হয়, তাদের বাড়িঘর লুট করা হয়, তাদের মন্দির ভাঙা হয়, ধর্ষণ করা হয় হিন্দু নারীদের। হিন্দুদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অপরাধের বিরুদ্ধে তারা ন্যায় বিচার চাইলে পুলিশ প্রায়শই নিরব থাকে। তারা এটা করে দুর্নীতি, অজ্ঞতা ও বৈষম্যমূলক ধারণা থেকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিপিড়নের শিকারদের আইনগত বা স্বাস্থ্যগত সহায়তা দেয়না পুলিশ।
উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৪ সালের প্রথম দুসপ্তাহে বাংলাদেশের ২১টি জেলায় হিন্দুদের ওপর ১৬০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রথম ৭০টি হামলাতেই ৪ মিলিয়ন টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, খুন, মারধর, নির্যাতন, অপহরণ, জোর করে ধর্মান্তরকরণ ও গণধর্ষণ। ্ওই দুসপ্তাহে ৫টি হিন্দু মন্দির ধংস করা হয়েছে, ৩ হাজারেরও বেশি পরিবার বাস্তচ্যুত হয়েছে। এরকম সহিংস ঘটনা বেশিরভাগ হিন্দুকে বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে তাড়িত করে।
সাফাদি বলেন, ভারতে তারা অনেক ভালো ব্যবহার পান।
সাফাদি আরো বলেন, আমি ভারতে যাই বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা উদ্বাস্তুদের প্রকৃত অবস্থা জানতে। আমি ভারতের কলকাতায় কালি মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি মন্দির পরিদর্শণ করি। আমি ভারত সেবা আশ্রম সংঘ দেখতে যাই। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে। তারা বাংলাদেশের হিন্দুদের সহায়তার জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে। সাফাদি জানান, এই সংস্থাটির ইউরোপ ও আমেরিকায় বেশ কিছু শাখা আছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত সংস্থা। আমি সেখানে শিপন কুমার বসু নামে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করি। তিনি ভারত ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইন সার্চ অব রুটস-এর প্রধানের সঙ্গে কাজ করছেন। এই সংগঠনটিও উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে কাজ করে।
সাফাদি অভিমত প্রকাশ করেন, বিশ্বের ্ওই অঞ্চলের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। বলেন, আমি কলকাতা গিয়েছি, কী করে আমি ইসরায়েলি প্রযুক্তি, কৃষি এবং অন্যান্য জিনিস দিয়ে তাদের সহযোগিতা করতে পারি, সে উদ্দেশ্য নিয়ে। তারা ইসরায়েলি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে চায়। কারণ তারা জানে ইসরায়েলি প্রযুক্তি হলো বিশ্ব সেরা। পশ্চিমবঙ্গের কৃষিতে যদি ইসরায়েলি প্রযুক্তি প্রয়োগ করা যায় তবে তা হবে পশ্চিমবঙ্গের কৃষিখাতের জন্য আশির্বাদ। এ কারণে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই দেখতে হবে।
সাফাদি ব্যাখ্যা করেন, ফ্লাইটে আমি অনেক ইসরায়েলি ব্যবসায়িকে দেখেছি, যারা ভারতে গিয়েছিলেন। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে বলেছেন, গত কয়েক বছর ধরে ভারতের সঙ্গে ইরায়েলের ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নততর হচ্ছে। সাফাদি বলেন, আমার মনে হয় বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার বদলাতে পারলে, মি. রহমান ভারতীয়দের সঙ্গে মিলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কাজ করবেন। তাদের অনেকে বলেছেন, যেসব ইসরায়েলির দ্বিতীয় পাসপোর্ট আছে তারা বাংলাদেশে যেতে পারেন, যে ব্যবস্থা কাতার ও অন্য উপসাগরীয় দেশের বেলায় কার্যকর। তারা চায় ইসরায়েলিরা বাংলাদেশে যাক এবং ব্যাবসা করুক। জেরুজালেম অনলাইন।