ইয়াছিন রানা : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা ঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘাতকচক্র সপরিবারে হত্যা করলেও তার দুই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকার কারণে ঘাতকদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।
এরপর স্বামী-সন্তানসহ ছয় বছর বিদেশে কাটিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যার কিছুদিন পর শেখ হাসিনা জার্মানি থেকে ইন্দিরা গান্ধীর সৌজন্যে ভারত আসেন এবং দেশে আসার আগ পর্যন্ত ভারতেই থাকেন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনের পর সংসদ থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি সভা-সমাবেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলাম।
১৯৮১ সালের ১৪, ১৫, ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে দল যখন ভাংগনের পর্যায়ে তখন শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি করে দলকে টিকিয়ে রাখা হয়। দলের স্বার্থে, দলের ঐক্যের স্বার্থে বিদেশে থাকা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত হলে এই দাবি এবং প্রচারণা আরো জোরদার হয়।
শেখ সেলিম বলেন, ঠিক সে সময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাকে ডেকে বলেন, এই মেয়েকে দেশে আনার দরকার কি? এই মেয়েকে দেশে না আনলেই ভাল হয়। এই মেয়েকে দেশে আনলে তো সমস্যা হবে।
প্রতুত্তরে শেখ সেলিম জিয়াউর রমহমানকে বলেন, বাবার কবর জিয়ারত করার অধিকারও কি তার নেই, কেনো সে আসতে পারবে না ?
ঊল্লেখ্য, শেখ হাসিনা দেশে আসেন ১৭ মে আর জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে মারা যান।
এরপর অনেক ঝড়-ঝাপটা, ঝুঁকি পারি দিয়ে আসলো সেই কাক্সিখত ১৭ মে। সকাল থেকেই হচ্ছিল কাল বৈশাখী ঝড়। ৬৫ কিলো মিটার ছিল ঝড়ের গতি। এরপরও তেজগাঁওয়ের এয়ারপোর্টে নেমে আসে শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মাদ নাসিম বলেন, সে দিন ঢাকা শহর লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছিল। তেজগাঁও থেকে ধানমন্ডি পর্যন্ত পুরো রাস্তায় ছিল মানুয়ের ঢল। সে দিন শেখ হাসিনা ধানমন্ডির বাসভবনে ঢুকতে চাইলেও তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ১৭ মে এক সমাবেশে শেখ হাসিনাকে বক্তব্য দিতে বলা হলে কিছুই বলতে পারেন নি কান্না জড়িত শেখ হাসিনা। শুধু একটা কথাই বলেছিলেন, আমি আপনাদের বোন, আমি আপনাদের মেয়ে, আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, আমি এর বিচার চাই, এর প্রতিশোধ নিতে চাই, আমার বাবার স্বপ্ন আমি পূরণ করতে চাই।
শেখ হাসিনা তার দুই শিশু সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে লন্ডনে রেখে এদেশে গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে আসেন তিনি।
দেশে আসার পর থেকে নানা ধরণের ঝড়-ঝাপটার মুখোমুখি হতে হয়েছে শেখ হাসিনার। দেশে আসার ৩৪ বছরে মোট ১৭ বার হত্যা চেষ্টার শিকার হয়েছেন তিনি, হয়েছেন ৩ বারের মত প্রধানমন্ত্রী, হয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারীদের একজন।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, শেখ হাসিনা যদি আগামী ১০ বছর দৃঢ়তার সাথে দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারেন তাহলে এই দেশ বিশ্বের বুকে উন্নত জাতি হিসেবে মাথা উচু করে দাড়াবে, বাঙ্গালী জাতি হবে বিশ্বে মধ্যে উন্নত এবং সমৃদ্ধ একটি জাতি।
দেশে ফেরার পর থেকেই শেখ হাসিনা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন। ‘‘রূপকল্প ২০২১’’ এর মধ্যম আয়ের বাংলাদেশকে ‘‘রূপকল্প ২০৪১’’ এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি উন্নত আধুনিক সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ব জননেত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।