ওমর শাহ : ঘটনাটি গত সপ্তাহের। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা। সামাজিক যোগাযোগে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ওই নেতার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ওঠে দেশবাসীর পক্ষ থেকে। দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা অহরহ। স্বামীর হাতে স্ত্রীকে নির্যাতন, গৃহকর্তার হাতে গৃহকর্মীকে নির্যাতন, শ্বাশুরির হাতে বধূ নির্যাতন পত্র পত্রিকার নিয়মিত খবর। তবে এ ঘটনাটি একটু ভিন্ন। নির্যাতিত এ নারী কোন গৃহকর্মী নন, নির্যাতনকারীর স্ত্রীও নন, তিনি পরকীয়ার বলির শিকার। দীর্ঘদিন পরকীয়ার পর স্ত্রীর অধিকারের দাবি তুলে ওই নেতার বাড়িতে গেলে তাঁর ওপর চালানো হয় এ অমানুষিক নির্যাতন। পত্র পত্রিকার খবরে তাই জানা যায়।
এ ঘটনায় দায় কাদের? কার? কাকে দেওয়া যায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি? একটি ঘটনা সমাজের নানা চরিত্র তুলে ধরে। ঘটনার ভেতরেও থাকে আড়াল ঘটনা। এ ঘটনায় ওই যুবলীগ নেতার পশুচরিত্র এ সমাজের একটি চিত্র অপরদিকে সমাজে স্বামী স্ত্রীর এ বন্ধন যে ভেঙ্গে দিচ্ছে অবৈধ পরকীয়া তার বাস্তব চিত্র। ঘরের সুখ রেখে নারী পুরুষ সুখ খুঁজে পরবুকে। পরবুকের সুখেও সুখী নয় তারা। সুখী হওয়ারও কথা নয়। কারণ এ সুখ এ প্রেম স্রষ্টাবিরোধী প্রেম। কারণ, আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আপনি মুমিনদের বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে আর হেফাজত করে স্বীয় যৌনাঙ্গকে। এ ব্যবস্থা অধিকতর পবিত্রতার সহজ উপায় । তাদের কর্ম সম্পর্কে আল্লাহ অবশ্যই অবগত আছেন। আর মুমিন নারীদের বলুন তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং হেফাজত করে স্বীয় লজ্জাস্থানের। তারা যেন স্বীয় স্বামী, পিতা, শশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা, আপন নারী, অধিকার ভুক্ত দাসী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ব্যতিত কারো সামনে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে ।” (সুরা নূর- ৩০-৩১)।
কুরআনের এ আয়াতের নারী পুরুষের সম্পর্ক ও দেখা-সাক্ষাতের সীমানা বলে দেওয়া হয়েছে। কোন অচেনা ও নির্ধারিত ১৪ জন ছাড়া নারী পুরুষের সঙ্গে কোন ধরণের সম্পর্ক ইসলামে বৈধ নয়। এ সম্পর্ক কল্যাণের বিপরীতে ভয়বহ পাপ পঙ্কিলতার দিকে টেনে নিয়ে যায়। সমাজে অস্থিরতা ছড়ায়। সংসার পুড়ে দুঃখের আগুনে। এ বিষয়ে মহানবী সা. বলেন, হে লোক সকল! তোমরা অবৈধ যৌন মিলনকে ভয় কর। কেননা তার ছয়টি অশুভ পরিণাম রয়েছে। । তিনটি দুনিয়ায় আর তিনটি পরকালে। দুনিয়ায় তিনটি পরিণাম হলো- ১. শ্রীহীনতা ২. অভাব, দারিদ্রতা ৩. জীবনকাল হ্রাস পেয়ে মৃত্যু বরণ। আর পরকালের তিনটি হলো – ১. পরম দয়ালু আল্লাহর ক্রোধ, ২. মন্দ হিসাব ৩. দোযখের শাস্তি। (শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকী; আল জামিউল কাবির সুয়ূতী) অপর এক বর্ণনায় আছে মহানবী সা. বলেন, ‘‘ চার প্রকার মানুষকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। তাদের উপর আল্লাহর ক্রোধ নেমে আসে। ১.বারবার শপথকারী ব্যবসায়ী ২. দাম্ভিক ফকির ৩. বৃদ্ধ ব্যভিচারী ৪. অত্যাচারী শাসক (নাসাঈ)।
রাসুল সা. এর হাদিসে যিনা ব্যভিচার বিষয়ে বারবার উম্মতকে সতর্ক করা হয়েছে। কুরআনেরও কঠোর শাস্তির বিধান বর্ণিত হয়েছে। কারণ যিনা ব্যভিচার পরকীয়া সমাজ সংসারের অভিশাপ। এই নিষিদ্ধ প্রেমের আগুনে ভেঙ্গে যায় পরিবার। ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে সাজানো গোছানো সোনার সংসার। ভেঙ্গে পড়া পরিবারের সন্তানদের বেড়ে ওঠায় নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত পরিবার সর্বত্রই ভয়ানক ব্যাধি এ পরকীয়ার অভিশপ্ত অভিসার। পরকীয়ার জেরে দাম্পত্য কলহের ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সন্তানদের উপর। এর বিষবাষ্পে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হচ্ছে সাজানো গোছানো সোনার সংসার। অবস্থার এই ক্রমাগত অবনতি দেখে চরম দুর্ভাবনায় আঁতকে উঠছেন রাষ্ট্রের সমাজ বিজ্ঞানী ও কর্তব্য ব
্যক্তিরা। তাই এখনই ভাবতে হবে এর প্রতিকার ব্যবস্থা নিয়ে। নতুবা এর চরম খেসারত দিতে হবে অনাগত প্রজন্মকে। এ ঘোষণা হাদিসেও বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন ‘‘আমার উম্মত ততদিন ভালই থাকবে যতদিন পর্যন্ত তাদের মধ্যে ব্যভিচার ও অবৈধ যৌন সদ্ভোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে না পড়বে। আর যখন ব্যভিচার তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করবে তখন তাদের আল্লাহর শাস্তি গ্রাস করবে । (মুসনাদে আহমাদ)