আমিন ইকবাল : ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানা, ওয়াকিনা আজাবান্নার।’ অর্থ : হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর, আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। [সুরা বাকারা : ২০১]। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এ দোয়াকে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ সা. এ দোয়াটি সবচেয়ে বেশি করতেন।
দোয়াটির ফজিলত
বিশিষ্ট তাবেয়ি হজরত কাতাদা রহ. সাহাবি হজরত আনাসকে রা. জিজ্ঞাসা করলেন, নবীজি সা. কোন দোয়া বেশি করতেন? উত্তরে আনাস রা. উপরোক্ত দোয়ার কথা জানালেন। তাই আনাস রা. নিজেও যখন দোয়া করতেন তখনই দোয়াতে উক্ত আয়াতকে প্রার্থনারূপে পাঠ করতেন। এমনকি কেউ তার কাছে দোয়া চাইলে তিনি তাকে এ দোয়া দিতেন। একদা তিনি মন্তব্য করেন, আল্লাহতায়ালা এ দোয়াতে দুনিয়া ও আখেরাতের সব কল্যাণ ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনা একত্রিত করে দিয়েছেন।
একবার রাসুলুল্লাহ সা. এক রোগী দেখতে গেলেন। তিনি দেখলেন, রোগী একেবারে হাড্ডিসার হয়ে গেছে। নবী সা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি আল্লাহর কাছে কি কোনো প্রার্থনা করেছিলে? সে নিবেদন করল, হ্যাঁ। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, হে আল্লাহ! আমার পরকালের শাস্তি আপনি আমাকে দুনিয়াতেই দিয়ে দিন। নবী সা. আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা কি কারো আছে? তুমি এখন থেকে এ দোয়া করতে থাক, রাব্বানা আতিনাৃ।’ দেখা গেল, এ দোয়ার বরকতে আল্লাহতায়ালা তাকে আরোগ্য দান করলেন।
অন্য আরেক বর্ণনায় আছে, নবী সা. রুকনে ইয়ামানি (কাবা শরিফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ) ও রুকনে আসওয়াদের (কাবা শরিফের দক্ষিণ কোণ) মাঝে উপরোক্ত দোয়া করতেন। তাই হজ ও ওমরার তাওয়াফকালে এ দোয়া পড়তে থাকা সুন্নত।
হাসানা শব্দের ব্যাখ্যা
বর্ণিত দোয়ার গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় অংশ হলো ‘হাসানা’ শব্দটি। বাংলায় এর অর্থÑ সুখ, কল্যাণ, মঙ্গল ইত্যাদি। আল্লাহতায়ালা হাসানা শব্দকে দুনিয়ার জন্য ব্যবহার করেছেন আবার আখেরাতের জন্যও ব্যবহার করেছেন। দুনিয়ার হাসানাকে ব্যাখ্যা করতে যেয়ে হজরত আলী রা. বলেছেন, নেককার স্ত্রী। ইবনে উমর রা. বলেছেন, নেককার সন্তান ও জনপ্রিয়তা। হজরত কাতাদা রহ. বলেছেন, সুস্বাস্থ্য ও পর্যাপ্ত রিজিক। হজরত হাসান রহ. বলেছেন, দ্বীনী জ্ঞান ও ইবাদতের তওফিক। সুদ্দি রহ. বলেছেন, উপকারী সম্পদ। হজরত জাফর রা. বলেছেন, বুজুর্গদের সান্নিধ্য। আল্লামা আলুসি রহ. উপরোক্ত ব্যাখ্যাগুলো উদ্ধৃতি করার পর মন্তব্য করেছেন, ‘আসলে হাসানা একটি ব্যপক শব্দ। কল্যাণ ও সুখের নির্দিষ্ট একটি দিক বা উপকরণ এখানে উদ্দেশ্য নয়। বরং সামগ্রিক ও পূর্ণাঙ্গ সুখ ও কল্যাণ এখানে উদ্দেশ্য হবে। আমাদের পূর্বসূরি মুফাসসিররা হাসানার ব্যাখ্যা নির্দিষ্ট করার জন্য উপরোক্ত মতগুলো পেশ করেননি। বরং তারা সহজে বুঝার জন্য উদাহরণ দিয়েছেন মাত্র।’
মোটকথা, দুনিয়ার হাসানা ও আখেরাতের হাসানা বলতে বুঝায়, মানুষের দুনিয়া ও পরকালের জীবনের সব প্রয়োজন পূরণ হওয়া এবং উভয় জীবনে সুখ, শান্তি ও আরাম-আয়েশে থাকা।