নাসিমুজ্জামান সুমন : ঘুমের সাথে স্মৃতিশক্তির জোড়ালো সম্পর্ক আছে, বিশেষ করে ঘুমের হালকা পর্বটির সাথে। সাধারণত আমরা বেশিভাগ এই সময়টিতেই স্বপ্ন দেখে থাকি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন করে স্মৃতিশক্তি তৈরি হওয়ার জন্য ঘুমের এই পর্বটি অত্যন্ত জরুরি। কারণ ঘুমের এই সময়েই মানুষের সব স্মৃতি তৈরি হয়ে থাকে। স্মৃতিশক্তির ওপরে ঘুমের প্রভাব নিয়ে সম্প্রতি ইদুরের ওপরে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। একজন মানুষ ঘুমের বিভিন্ন পর্যায়ে তার রাতটি অতিক্রম করেণ। এ সময় কখনও তিনি গভীর ঘুমে থাকেন আবার কখনও থাকেন আধো ঘুমে অর্থাৎ ঘুমের হালকা পর্বে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় ঘুমের এই হালকা পর্বটিকে বলা হয় ‘আরইএম’।
স্মৃতিশক্তিকে জোড়ালো করতে গভীর ঘুম হওয়া খুবই জরুরি। কারণ, এ সময়ই মানুষের স্মৃতি সংহত হয়। কিন্তু ঘুমের হালকা পর্বটির সময় মস্তিষ্কের ভেতরে কী ঘটে সেটি খুবই রহস্যময়। ঘুমের হালকা পর্বের পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করাও কঠিন। কারণ, এই পর্বটি হয় ক্ষণস্থায়ী এবং খুবই ভঙ্গুর। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠেছে ইদুরের বেলায়। তারা দেখেছেন, হালকা ঘুমের সময় ইদুরের মস্তিষ্কের ভেতরে কিছু কিছু কোষ বা সার্কিট যদি নিষ্ক্রিয় করে দয়া যায় তাহলে এই প্রাণীটি আগের দিন যেসব ছোট ছোট জিনিষ শিখেছিল সেগুলো পরের দিন আর মনে করতে পারেনা।
বিবিসির বিজ্ঞান বিষয়ক সংবা“াতা জনাথন ওয়েভ বলছেন, ঘুমের সাথে স্মৃতিশক্তির সম্পর্ক নিয়ে এটাই সবচেয়ে বড় গবেষণা। তিনি বলেন, ‘সারদিনে আপনার যে অভিজ্ঞতা সঞ্চার হয় সেগুলো মস্তিষ্কের ভেতরে খুব অল্প সময়ের জন্য জামা থাকে। রাতের বেলায় আপনি যখন ঘুমিয়ে পড়েন তখন সেই ঘুমের বিভিন্ন পর্যায়ে আপনার মস্তিষ্কের ভেতরে বিভিন্ন প্রক্রিয়া কাজ করতে থাকে। তখন সারদিনের অভিজ্ঞতা মাথার ভেতরে সংহত হতে থাকে। অর্থাৎ ঠিক তখনই আপনার স্মৃতি গঠিত হয়। যেসব জিনিষ আপনি মনে রাখতে চান শুধুমাত্র সেগুলোই আপনার মস্তিষ্কের সার্কিটের ভেতরে ঢুকে জমা হতে থাকে।’
এই পরীক্ষাটি চালাতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা ঘুমন্ত কিছু ইদুরের মস্তিষ্কে ছোট্ট একটি অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করেছেন। এই ফইবার দিয়েই তারা ইদুরের মাথার ভেতরের কিছু নিউরণকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। জনাথন ওয়েভ বলেন, ‘বিজ্ঞানীরা ইদুরের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। গবেষণার জন্য বাছাই করা ইদুরটি প্রতিদিনই নানা রকম জিনিষ শিখছে। যেমন কোথায় খাবার পাওয়া যায় বা ভয় পেলে কী করতে হবে প্রভৃতি। তারপর ইদুরটি যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন তার হালকা ঘুমের সময় মাথার ভেতরে আলোর বিচ্ছুরণের সাহায্যে ইদুরটির মস্তিষ্কের ভেতরে বেশ কিছু সার্কিট বন্ধ করে দেয়া হয়।’
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইদুরের মস্তিষ্কে ওই বিশেষ কোষগুলো বন্ধ করে দেয়ার ফলে তার মস্তিষ্কের ভেতরের কিছু কাজও বন্ধ হয়ে যায়। এবং পরে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, তাদের স্মৃতিও কিছুটা লোপ পেয়েছে। অর্থাৎ আগের দিন যা কিছু শিখেছিল পরের দিন অনেকটাই তারা মনে করতে পারছেনা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ কেন তাদের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে সেই গবেষণার ক্ষেত্রে ইদুরের ওপর চালানো এই গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তারা বলছেন, ঠিক একই ধরণের পরীক্ষা তার এখন মানুষের শরীরেও চালাতে চান।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।