ওমর শাহ : এ অপমান শুধু শিক্ষকের নয়, এ অপমান ধর্মেরও। ধর্মের নাম ব্যবহার করে একজন শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করার ঘটনায় আর কি বাকি থাকলো? ধর্মেরও আর কি মর্যাদা রইল? অমানুষরা প্রতিনিয়ত ধর্মকে ব্যবহার করে কেন সমাজে নৈরাজ্য ছড়াচ্ছে? ধিক সমাজকে। এবার এ ধর্মের অপব্যবহারে শিকার একজন মর্যাদাশীল শিক্ষক। যিনি সমাজ ও দেশ গড়ার কারিগর।
পুরো ঘটনাকেই সাজানো নাটক বলে দাবি করেছন লাঞ্চিত নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যান্দি এলাকায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। নির্যাতিত ছাত্র শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। এখানে ধর্ম কোন বিষয় ছিল না, ছিল শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাল, চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র। শেষ পর্যান্ত ষড়যন্ত্র সফল করতে ব্যবহার করা হলো ধর্মকে।
মুসলিম সমাজে শিক্ষক মাত্রই বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। কারণ শিক্ষকেরা মানুষ তৈরির কারিগর। শিক্ষকেরা জাতির প্রধান চালিকাশক্তি। এককথায় বলা যায়, শিক্ষক মানুষ চাষ করেন। যে চাষাবাদের মধ্য দিয়ে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে নীতি-নৈতিকতা ও জীবনাদর্শের বলয় একজন শিক্ষার্থী তার ব্যক্তিগত ও কর্মময় জীবনকে মুখরিত করে। পাশাপাশি পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র তার দ্বারা উপকৃত হয়। মহানবী (সা.) যে ঐশীজ্ঞান অর্জন করেছেন, সে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টিকর্তা, মানুষ ও প্রকৃতির পারস্পরিক সম্পর্কের নীতিমালা শিক্ষা দান করেছেন। তিনি নিজেই এ পরিচয় তুলে ধরে ঘোষণা করেছেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমি প্রেরিত হয়েছি।’
শিক্ষকের মর্যাদায় নবী করিম (সা.) বলেন, ‘দুই ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারও পদ-গৌরব লোভনীয় নয়। তা হলো ১. ধনাঢ্য ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তা সৎপথে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন। ২. ওই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ বিদ্যা দান করেছেন এবং সে অনুসারে সে কাজ করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।’
অপর এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর পরে, রাসুলের পরে ওই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা মহানুভব যে বিদ্যার্জন করে ও পরে তা প্রচার করে।’ (মিশকাত) রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ব্যতীত কেউই আমার আপন নয়।’ শিক্ষকের মর্যাদা প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, ‘যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?’ (সূরা আয-যুমার, আয়াত-৯)
কুরআন হাদিসে শিক্ষকের এ মর্যাদা ঘোষণা করা হয়েছে। আর আমরা আজ কুরআন হাদিসকে বিক্রি করে ভিন্ন খাতে ব্যবহার করায় ব্যস্ত। এ অপমান শুধু জাতি ও দেশের নয়, এ অপমান ধর্মেরও। ধর্মের এ অপব্যবহার অচিরেই বন্ধ না করলে সমাজে আরও ভয়াবহ চিত্র দেখতে হবে।