মানসিক রোগে আক্রান্ত এবং ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানা আটক বা নিজেদের জিম্মায় নেওয়ার অধিকার দেওয়া হচ্ছে পুলিশকে। তবে সুস্থ ও স্বাভাবিক ব্যক্তিকে মানসিক রোগী সাব্যস্ত করলে তার প্রতিকারও রাখা হয়েছে আইনে।
এমন বিধি-বিধান যুক্ত করে সরকার একটি নতুন আইন করছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন-২০১৬’ নামে আইনের খসড়াটি তৈরি করেছে। শিগগির এটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
আইনে বিনা পরোয়ানায় মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আটকের পাশাপাশি তাঁর ব্যাপারে ফৌজদারি আইনের বিধানাবলি প্রয়োগসহ প্রতিকারের বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায়। মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা পদ্ধতি, চিকিৎসা শেষে তাঁর ছাড়পত্র প্রদান, মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক আদালত প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নতুন এ আইনে।
একই সঙ্গে কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে মানসিক রোগী সাজিয়ে জোরপূর্বক তাঁর সম্পত্তি আত্মসাৎ বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে চিকিৎসকের কাছ থেকে সনদ আদায় করলে চিকিৎসক ও সনদ আদায়কারী উভয়েরই শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে এ আইনে। তবে মানসিক আক্রান্ত কোনো রোগী স্বেচ্ছায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে না চাইলে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে উপযুক্ত অভিভাবক বা পুলিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভর্তি করাতে পারবে।
মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পুলিশের জিম্মায় নেওয়ার এখতিয়ার প্রসঙ্গে খসড়া আইনের ১৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘পুলিশ স্টেশনের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রত্যেক পুলিশ কর্মকর্তা তাহার স্থানীয় অধিক্ষেত্রের মধ্যে কোনো ব্যক্তি মানসিক রোগে আক্রান্ত এবং নিজের যতœ নিতে অক্ষম হিসেবে ধারণা করিবার কারণ থাকে এবং মানসিক রোগের কারণে উক্ত ব্যক্তিকে বিপজ্জনক মনে করিবার কারণ থাকে তবে তাহাকে নিজের জিম্মায় গ্রহণ করিয়া ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানাবলি অনুসরণপূর্বক প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করিবেন।’
মানসিক রোগীর চিকিৎসার বিষয়ে আইনের ১৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত মানসিক রোগী চিকিৎসার প্রতিষ্ঠানে অনিচ্ছাকৃত ভর্তির তারিখ হইতে ১৮ দিন পর্যন্ত ভর্তি থাকিবে; তবে শর্ত থাকে যে, ক্ষেত্রমতে উপযুক্ত আদালত এই মেয়াদ পুনর্বিবেচনার এখতিয়ার সংরক্ষণ করিবে।’
মানসিক রোগীর সম্পত্তি রক্ষার বিষয়ে আইনের ২০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তি তাহার সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে অক্ষম হইলে আদালত একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে তাহার সম্পত্তির ব্যবস্থাপক নিযুক্ত করিতে পারিবেন; তবে শর্ত থাকে যে, এ ক্ষেত্রে রোগীর স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাইবে এবং উক্ত ব্যক্তির কোনো বৈধ উত্তরাধিকারীকে ব্যবস্থাপক হিসেবে নিযুক্ত করা যাইবে না।’
মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক আদালত প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আইনের ২২ নম্বর ধারায় উল্লেখ হয়েছে, ‘এই আইনের বিধানাবলি কার্যকর করিবার লক্ষ্যে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানাবলি সাপেক্ষে প্রতি জেলায় জেলা জজের অধীনস্থ ন্যূনতম সাব-জজ পদমর্যাদার একজন বিচারকের নেতৃত্বে মানসিক স্বাস্থ্য আদালত প্রতিষ্ঠা করা হইবে। মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মানবাধিকার ক্ষুণœকারী যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ আদালত স্বেচ্ছায় বা অভিযোগের ভিত্তিতে বা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই আইনের অধীনে কৃত অপরাধ আমলে গ্রহণ করিবে।’
মিথ্যা সনদ প্রদানের বিষয়ে আইনের ২৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার মানসিক রোগে আক্রান্ত না হওয়া সত্ত্বেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানসিক রোগে আক্রান্ত হিসেবে কোনো ব্যক
্তিকে মিথ্যা সার্টিফিকেট প্রদান করেন অথবা যদি মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানসিক রোগে আক্রান্ত নন মর্মে সার্টিফিকেট প্রদান করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক এক বৎসর কারাদ-ে বা অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা অর্থদ-ে অথবা উভয় দ-ে দ-িত হইবেন।’
খসড়া আইনের ২৫ নম্বর ধারায় আরো বলা হয়েছে, সত্য গোপন করিয়া আদালত হইতে রিসিপশন আদেশ হাসিলের মাধ্যমে কোনো মানসিক রোগগ্রস্ত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানসিক হাসপাতালে বা মানসিক সেবালয়ে ভর্তিপূর্বক আটক রাখে অথবা অবস্থান করায়, তাহা হইলে ওই ব্যক্তি অনধিক এক বৎসর সশ্রম কারাদ- বা অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত হইবেন।’
আইনের ২৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘কোনো মানসিক সমস্যায় বা মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে অপরাধ সংঘটনের জন্য সুবিধাজনক মনে করিয়া অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো অপরাধ সংঘটনের জন্য ব্যবহার করিলে উক্ত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য ন্যূনতম দুই বৎসর কারাদ-ে দ-িত হইবেন।’ এনটিভি