এম কবির : শিক্ষককে কার ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় আলোচিত-সমালেচিত জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমান। শিক্ষক লাঞ্ছনার জন্য সরকারের ৮ মন্ত্রী সেলিম ওসমানের শাস্তি দাবি করেছেন। এ বিষয়ে এই মুহূর্তে কোনো সিদ্ধান্ত এখন নেননি জাতীয় দলটি। বিষয়টি সরকার ও উচ্চ আদালতে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় তারা, তাই আদালতের সিদ্ধান্তের পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন তারা।
গত ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে ছাত্রকে মারধর ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে জনসম্মুখে কান ধরে উঠবস করান স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জাতীয় পার্টিতেও বিষয়টি আলোচিত হয়। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিষয়টি অবগত হওয়ার পর দলকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখতে নির্দেশ দেন।
এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগের প্রমাণ পায়নি বলে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন।
রোববার সচিবালয়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, শিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, যেহেতু এখন বিষয়টি হাইকোর্টেও গড়িয়েছে। তাই উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবেন। যদি এ মুহূর্তে সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তাহলে তার পাশাপাশি জাতীয় পার্টিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মে করছেন তারা।
দলের একটি সূত্র জানায়, রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমত হলেও ইসলামী এক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং হেফাজতে ইসলামসহ বেশ কিছু ইসলামী দল এবং সংগঠন সেলিম ওসমানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা শ্যামল কান্তি ভক্তকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করছে, বিবৃতি দিচ্ছে। এমনকি সেলিম ওসমানকে নিয়ে প্রশংসামূলক গান বেঁধেছে অনেকে।
জাতীয় পার্টি মনে করছে, এই অবস্থায় যদি সেলিম ওসমানকে দল থেকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দেয়া হয়, তাহলে দলও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ওসমান পরিবারের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়া শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বিষয়টি নিয়ে বিষোদগার করছেন, বিষয়টি জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ভালোভাবে দেখছে না। সবকিছু চিন্তা করেই এই মুহূর্তে সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না দল। যদি পুরো বিষয়টিই নির্ভর করছে চেয়ারম্যান এরশাদের ওপর। কারণ এরশাদকে পুরো ঘটনা খুলে বলেছেন সেলিম ওসমান।
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তদন্ত রিপোর্টের সাপেক্ষে পার্টির প্রেসিডিয়াম মিটিং হবে, সেখানে বিষয়টি আলোচনা হবে। তাছাড়া আদালতও বিষয়টি নিয়ে একটি আদেশ দিয়েছেন, সেই রিপোর্ট আসুক আমরা দেখি।
বেশ কয়েকটি ইসলামি দল ও সংগঠনের সেলিম ওসমানের পক্ষাবলম্বন এবং ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবি করে মিছিল সমাবেশ করার বিষয়টি দল কীভাবে দেখছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যকিছু দল তার পক্ষে নেমেছে, এটা তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে তারা নেমেছে। আমরা আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি। এই মুহূর্তে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না।