ইসহাক আসিফ: ১৪দলীয় জোটের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার যখন সফলতার সাথে দেশ পরিচালনা করছে ঠিক সেই সময়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেছে একটি মহল। বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন সভা-সেমিনার কিংবা মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষনেতা এবং মন্ত্রী-এমপিরা এধরনের অভিযোগ করে আসছেন। সরকার পতনের জন্য আন্তর্জাতিক মহলগুলো বিশেষ করে আমেরিকা ষড়যন্ত্র করছে বলেও তাদের কথা ওঠে আসছে।
দলটির শীর্ষনেতারা মনে করেন, আন্তর্জাতিক মহলগুলো জঙ্গিবাদের কথা বলে, জামায়াত-বিএনপি দ্বারা জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়ে, গুপ্তহত্যা করে, হরতাল দিয়ে দেশে নৈরাজ্য তৈরি করে, অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে সরকারের পতন ঘটাতে চাইছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘুরে ফিরেই যেন জঙ্গিদের বেড়াজালে জড়িয়ে আন্তর্জাতিক ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার এবং আওয়ামী লীগ। যে ষড়যন্ত্রে ধ্বংস হয়েছে আফগানিস্তান, ইরাক, পাকিস্তান। আর এই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি বুঝতে পেরে হয়তো ক্ষমতা হারানোর ভয়ে এবং দেশ রক্ষার জন্য বিবৃত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাই আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে আমেরিকার কড়া সমালোচনা করছেন।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমাদের ভয়ের কিছুই নেই। আমি আবারো দৃঢ়ভাবে বলছি বাংলাদেশে আইএস নেই। আর দেশে বিদেশী গোয়েন্দাদের ষড়যন্ত্র এবং দেশীয় সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম সম্পন্ন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা দেশীয় ছয়জন শীর্ষ জঙ্গির ছবিসহ নাম দিয়ে গ্রেফতারের জন্য প্রচার করছি, অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে গত ১৭ই মে এক অনুষ্ঠানে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, আপনাদের গণতন্ত্র আটলান্টিকের ওপারে, এপারে আপনারা গণতন্ত্র মানেন না, তাহলে আপনারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করতেন না এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিতেন না। আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর চেষ্টা করবেন না, বরদাশত করা হবে না। এর আগে ১২ই মে আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক কামরাঙ্গীরচরে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিএনপি জামায়াত পাকিস্তানের আইএসআই, ইসরায়েলের মোসাদ যাকে দিয়েই দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র করুক না কেনো তাতে কোনোভাবেই সফল হবে না। ৮ই মে ১৪ দলের গণ সমাবেশে খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, আন্তর্জাতিক মহলগুলো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। যেমনি করে একাত্তরে ষড়যন্ত্র করে আমাদের পরাধীন রাখতে চেয়েছিল। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। একই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি একমাত্র শেখ পরিবার। তাই এই পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য ৭৫-সালে যেমন দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র হয়েছিল, ঠিক তেমনি এখনো এই পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ষড়যন্ত্র করে স্বাধীনতা বিরোধীরা ৭৫-এর পর দীর্ঘদিন এই পরিবারকে ক্ষমতার বহিরে রাখলেও এখন আর কোন ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিবাদের ইস্যুতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে। কোন একটি ঘটনা ঘটার পরই সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোরেসুরে বলা হয়েছে-অমুক জঙ্গি সংগঠন থেকে করা হয়েছে, তমুক জঙ্গি সংগঠন থেকে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আর এর প্রমাণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ফেসবুক বা টুইটারের কোন একটি একাউন্ট থেকে ঘটনাটি ঘটানোর স্বীকারোক্তিমূলক একটি বার্তা, যদিও এগুলোর কোন বিশ্বসযোগ্য ভিত্তি ছিল না। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এই ফেসবুক, টুইটার বা কোন ওয়েব সাইটের
স্বীকারোক্তিমূলক বার্তাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য। এখন কোন একটি হত্যাক- ঘটলেই দেখা যায় আমেরিকার সাইট ইন্টিলিজেন্স বলছে বাংলাদেশের অমুক ঘটনার দায় স্বীকার করেছে আইএস। কিন্তু আগে কোন একটি ইস্যু আড়াল করার জন্য দেখা গেছে, জঙ্গিবাদের ইস্যু সামনে নিয়ে আসা হয়েছে যাতে ব্যর্থতার ইস্যু, সমালোচনার ইস্যু আড়াল হয়ে যায়। এছাড়া পুলিশের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, কোন ঘটনার ব্যর্থতা ঢাকার জন্য দায় সারা গোছের একই কথা বলা হয়েছে যে, এ ঘটনা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম করেছে, বা অন্য কোন জঙ্গি সংগঠন করেছে। আর মাঝে মাঝে দাড়ি-টুপি-আলখেল্লা পরা কিছু লোক গ্রেফতার করে প্রেস ব্রিফিং করে তাদের সকল ব্যর্থতা ঢেকে বাহবা কুড়িয়েছেন। কিন্তু সাগর-রুনিসহ বিভিন্ন হত্যাকা-ের তদন্ত করে সুরাহা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর এখন জঙ্গীবাদের ইস্যুটি যেন সরকারের জন্যই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার-প্রশাসনের তরফ থেকে দেশে জঙ্গি নেই, আইএস নেই বলে হাজারো প্রচারণা চালালেও আমেরিকার ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স’ থেকে ঠিকই ঘোষণা আসে ইমাম হত্যায় আইএস’র দায় স্বীকার, মুক্তমনা ব্লগার হত্যায় আইএস’র দায় স্বীকার। প্রায় প্রতিটি হত্যাকা-ের পর পরই সাইট ইন্টেলিজেন্সের এমন প্রচারণা এখন নিত্যদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবশেষ কুষ্টিয়ায় একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপককে গুরুতর আহত করার ঘটনায়ও দায় স্বীকার করেছে আই এস এবং তার খবরও যথারীতি ছাপা হয়েছে আমেরিকাভিত্তিক সাইট ইন্টিলিজেন্স। আইএস নিয়ে সরকার প্রথম বিব্রত অবস্থায় পড়ে বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিম সফর বাতিল করায়। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশে আইএস নেই বলে ঘোষণা দিলেও কর্মকা- ঘটার পর আইএস দায় স্বীকারের প্রবণতা যেন বেড়েছে। কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুর থেকে আইএস সদস্য বলে বাংলাদেশের শ্রমিকদের ছাটাই ও গ্রেফতার করে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেশের শ্রমবাজারের ইমেজও নষ্ট করা হয়েছে।