বিশ্বজিৎ দত্ত : কাজী নজরুল সম্পর্কে পাকিস্তান আমলে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল নজরুল একজন আধাহিন্দু ভারতীয় কবি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একটি নোটে বিষয়টি এভাবেই তুলে ধরা হয়েছিল। ১৯৫০ সালের ৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক) বিভাগ ‘ফুলার রোড’-এর নাম ‘কবি নজরুল অ্যাভিনিউ’-এ পরিবর্তন করার একটি প্রস্তাব নোটশিটের মাধ্যমে উত্থাপন করে। নোটশিটের প্রথমেই স্বরাষ্ট্র বিভাগের সূত্রপাতকারী কর্মকর্তা নিচের কারণ উল্লেখ করে ফুলার রোডের নাম পরিবর্তনের বিরোধিতা করেন। ১. কবি এখনও বেঁচে আছেন। ২. তিনি কখনও পাকিস্তানে আসা এবং এখানে বসবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। এখনও তিনি আধাহিন্দু (গুজবে জানা যায়) জীবনযাপন-পদ্ধতি অব্যাহত রেখেছেন।
৩. যদি প্রস্তাবটি কার্যকর করা হয়, তবে সংবাদমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টির সুযোগ বা যুক্তি সৃষ্টি হবে এই কারণে যে, একটি ইসলামিক রাষ্ট্র এমন একজন মানুষকে সম্মানিত করেছে, যে মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও নিজের ইচ্ছায় অ-ইসলামিক জীবনযাপন বেছে নিয়েছে।’
এরপর স্বরাষ্ট্র বিভাগের পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ১৯৫০-এর ৩ সেপ্টেম্বর নিচের মতামতে বলেন,‘যদি ফুলার রোডের নাম পরিবর্তন করা হয়, তবে তা হওয়া উচিত এমন একজনের নামে, যিনি মুসলমান ও পাকিস্তানের প্রীতি ও ভালোবাসা অর্জন করেছেন। কবি হিসেবে তিনি (নজরুল) যাদের প্রীতি অর্জন করেছেন, তারা ব্যতীত এই প্রদেশের সাধারণ মানুষ তার (নজরুল) প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। তাই প্রস্তাবটিতে স্বরাষ্ট্র বিভাগ সম্মতি দিতে পারে না। যদি তার নাম এই প্রদেশের কোনো কিছুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করতে হয়, তবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম বিবেচনায় আনার পর তা করা উচিত। নোটশিটের শেষে ৩ অক্টোবর পূর্ব বাংলা সরকারের উপসচিব নিম্নোক্ত মতামত দেন: ‘অস্বীকার করার উপায় নেই যে, কাজী নজরুল ইসলাম এ সময়ের সবচেয়ে খ্যাতিমান মুসলিম কবি, যিনি বাংলায় (সাহিত্য) রচনা করেছেন। তার জীবনের কিছু সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য আছে, যা তার নামে সড়ক নামকরণের বিরুদ্ধে হাজির করা যায়। পাকিস্তানের সঙ্গে তার কোনো অন্তরঙ্গ সম্পৃক্ততা নেই। উপরন্তু তিনি বসবাস করছেন ভারতে। তথাপি সম্ভবত এই সরকার তার জন্য কিছু ভাতা বরাদ্দ করেছে। আমি অনুমান করি, কিছু বছর ধরে তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন অবস্থায় আছেন। আমার ধারণা, মানসিক ভারসাম্য হারানোর আগে তিনি এক হিন্দু নারীকে বিয়ে করেছেন এবং আংশিক হলেও ইসলামি জীবনযাপন পরিত্যাগ করেছেন। তাই এই পরিকল্পনাটি পরিত্যাগ করাই হবে অধিক নিরাপদ এটাই আমাদের সুপারিশ। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম