রফিক আহমেদ : বিভিন্ন বাম দলের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, সংবিধানের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা সংশোধনের নির্দেশনা বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। বুধবার বাম দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে ও বিবৃতিতে তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের কাছে ৫৪ ধারা সংশোধনের নির্দেশনা বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বলেন, এই রায় একটি ঐতিহাসিক রায়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই রায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ৫৪ ধারার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ও গণতান্ত্রিক আইন পরিপন্থি একটি কালো আইন বাতিল ও সংশোধনের পক্ষে হাইকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে সরকারের আপত্তি নিষ্পত্তি করতে উচ্চ আদালতের ১২ বছর পর হলেও রায়টি ‘একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে’ বলে অনেকেই মনে করেন। তবে এখনও বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ পুলিশ অ্যাক্ট প্রশাসন বিধিসহ উপনিবেশিক আমলের ধাঁচে রচিত কিংবা উত্তরাধিকারী হিসেবে রক্ষিত আইনবিধি বিধানের একটা বড় ধরণের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নতুনভাবে সচেতন মহলের কাছে তাগিদ সৃষ্টি করেছে। শাসক শ্রেনী দুর্নীতি করলে সমাজে সুনীতি আসে না। শাসন ব্যবস্থায় স্বৈরাচার থাকলে জনমানুষের গণতান্ত্রিক চেতনার উদয় হয় না। পুলিশ বা প্রশাসনের অমানবিক আচরণ মানবিক চেতনা ও মূল্যবোধ গড়ে উঠতে সাহায্য করে না। আইন সবার জন্য সমান না হলে সেটা কাউকে স্বেচ্চাচারিতা হতে উদ্বুদ্ধ করে। আবার বিনা কারণে বহু মানুষের হাতে পায়ে শিকল পরায়।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আসম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার সংক্রান্ত ৫৪ ধারা এবং রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞসাবাদ সংক্রান্ত ১৬৭ ধারা নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপিল বিভাগে বহাল রাখা আইনের শাসনের পক্ষে সহায়ক হবে। এ সকল বিষয়ে তাঁরা যে গাইড লাইন দিয়েছেন তা শুধু অভিনন্দন যোগ্যই নয় অধিকন্তু তা উপনিবেশিক ধাঁচের আইন ও সরকারের নিবর্তনমূলক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সংবিধানের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা (বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার) ও ১৬৭ ধারায় আসামিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ (পুলিশি রিমান্ড) সংশোধনের নির্দেশনা বহাল রেখে আপিল বিভাগের রায় ‘নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষায় ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
তিনি রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এই রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। একই সঙ্গে ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার ও বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধ এবং রাষ্ট্রীয় হেফাজতে মৃত্যু রোধেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সর্বোচ্চ আদালতসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।