মমিনুল ইসলাম: মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী থাকাকালে সরকারি কাজে ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহার করায় ব্যাপক সমালোচিত হন হিলারি ক্লিনটন। এনিয়ে সম্প্রতি একটি বহুল প্রতীক্ষিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। প্রতিবেদন বলা হয়, সরকারি কাজের জন্য বিনা অনুমতিতে ব্যক্তিগত ইমেইল সার্ভার ব্যবহার করে সরকারি বিধি ও নিরাপত্তা প্রোটকল অবজ্ঞা করেছেন হিলারি ক্লিনটন।
এ প্রতিবেদন সম্পর্কে হিলারির একটি সাক্ষাতকার নিয়েছেন মার্কিন বাণিজ্যিক টেলিভিশন এনবিসির রাজনৈতিক পরিচালক চাক টড। পরিশেষে হিলারি একটি মাত্রই কারণ দেখান, এ বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনের একেবারেই কিনারে থাকায় এমনটি করেছেন তিনি। বলেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনে ব্যক্তিগত ইমেলই ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। যদিও তার জন্য অনুমতি নিতে হয়।
শুক্রবার এ বিষয়ে একটি বিশ্লেষণে টড তার সহকর্মী আন্দ্রেয়া মিচেলকে বলেন, এসব ইমেইলের ব্যাপারে হিলারির কাছে কোন ভাল উত্তর নাই। টড মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মহাপরিদর্শকের প্রতিবেদনের ওপর এই প্রথম সরাসরি সাক্ষাতকার নেন।
টড হিলারিকে ২০১০ সালের নভেম্বরে সহকর্মী হুমা আবেদিন এর সঙ্গে একটি ইমেইল বিনিময় সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। এ মেইলে হিলারি ইঙ্গিত দেন, তিনি সরকারি ইমেইল ব্যবহার শুরু করতে চাননি। কারণ তিনি তার তার ব্যক্তিগত ইমেইল ‘প্রবেশযোগ্য’ করতে চাননি।
তাকে প্রশ্ন করা হয় কেন সে এমনটা চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, কেউই তার ব্যক্তিগত ইমেইল সার্বজনীন করতে চায় না। আমি মনে করি এটা খুবই স্বাভাবিক।
টড প্রশ্ন করেন এর পেছনে সবচেয়ে যৌক্তিক কারণ কি ছিল?
হিলারি বলেন, এ ইমেইল বিনিময়ে কোন সুবিধা নেয়া হয়নি। বাসায় ব্যক্তিগত সার্ভার থাকা যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনের নাগালের বাইরে। এছাড়া এটা অন্য কোনভাবে দেখা যেতে পারে না। ইমেইল ব্যবহারে এটাই একমাত্র কারণ।
ওই প্রতিবেদনে বিভিন্ন সময়ে দেয়া হিলারির বক্তব্যের অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে ক্লিনটন যুক্তি দেখান, এ প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয়েছে, পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। যদিও এতে জনগণ উদ্বিগ্ন হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
হিলারি আরও বলেন, প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে “ ইমেইলে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র দপ্তরের এই পদ্ধতিগত দুর্বলতা বহুদিনের। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগেও এই দুর্বলতা ছিল।” এ বিষয়ে হিলারি বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, আমি আমার পূর্বসুরীদের মতোই ছিলাম।”
তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, হিলারি সরকারি ইমেইল ব্যবহারে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এমনকি তার সহকর্মী ইমেইল হ্যাকিং হওয়ার সতর্ক করার পরও তা করেন তিনি। এছাড়াও প্রশাসন ছাড়ার আগে সব ইমেইল পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে সমর্পণ না করার সমালোচনা করা হয় প্রতিবেদনে।
একইসঙ্গে হিলারি ক্লিন্টনসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ই-মেইল এবং কম্পিউটারের অন্যান্য তথ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছিলেন বলেও এতে অভিযোগ করা হয়েছে।
তবে ঠিকঠাক মত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলেও হিলারির সার্ভারে অন্য কারো অনুপ্রবেশের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
রাষ্ট্রীয় কাজে হিলারির ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহারের বিষয়টি মার্চে জনসম্মুখে প্রকাশ পায়। তারপর থেকে সরকারি স্পর্শকাতর তথ্য তিনি কীভাবে সামলেছেন তা নিয়ে শুরু হয় প্রকাশ্য পর্যালোচনা।
এক পর্যায়ে নিজের কাজের ব্যাখ্যা দিতে ও আত্মপক্ষ সমর্থন করতে বাধ্য হন হিলারি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহারকে ‘ভুল’ হিসেবে স্বীকার করে এজন্য ক্ষমা চেয়েছেন ডেমোক্রেট দল থেকে
প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিলারি।- ডেইলি কলার।