ডেস্ক রিপোর্ট : নির্বাচকদের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা পুরনো। দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে প্রধান নির্বাচক আকরাম খান এক সময় পদত্যগ করেন। এজন্য বিসিবি সভাপতি আ হ ম মুস্তাফা কামালের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্নও হন। ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে এই নির্বাচক কমিটির স্বাধীনতা নিয়েও নানা সময় নানা কথা উঠেছে। এরই মাঝে অবশ্য কমিটি তাদের সাফল্য দেখিয়েছে দল নির্বাচন করে। বিশেষ করে ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের সফল্য নতুন ইতিহাস রচনা করে। দল নির্বাচনে এই সফল্যের রহস্য কি?
এই নিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রথম হলো নির্বাচক কমিটিতে যতজনই সদস্য থাকুক না কেন, তাদের দেশের ক্রিকেটার চিনতে হবে, জানতে হবে। নতুন একজন ক্রিকেটারকে দলে নিয়ে তখনই চমক দেখানো সম্ভব যখন, তাকে নির্বাচকরা ভালো করে চিনবেন। সেটি কাদের পক্ষে সম্ভব- যারা নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা দেখেন, ক্রিকেটারদের খবর রাখেন। তা না হলে কারিশমা দেখাবেন কি করে? নতুন কেউ যদি এখানে আসে, যারা ক্রিকেটার চিনবে না তাদের সঙ্গে তখনই মতবিরোধ হবে। এতে সফলতা আসবে না। কমিটি এখন যেমন স্বাধীন তেমনটাই থাকতে হবে। এখানে এমন কাউকে থাকলে হবে না যে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাহলেই নির্বাচকরা সফল হবেন। কারিশমা দেখাতে পারবেন।’
প্রস্তাবিত সাত সদস্যের নির্বাচক কমিটিতে থাকবেন প্রধান কোচ, ম্যানেজার ও বোর্ড পরিচালক। বর্তমান কোচ চন্দ্রিকা হাথুরুসিংহে দুই বছর ধরে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে আছেন। তিনিও এ কমিটিতে আসবেন। এছাড়া ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন যদি থাকেন তিনিও আসবেন কমিটিতে। আরও থাকবেন টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান। সেই হিসেবে খালেদ মাহমুদ ও আকরাম থাকলে দুজন পরিচালক থাকবে কমিটিতে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, হাথুরুসিংহে যখন বাংলাদেশের কোচ থাকবেন না তখন এই সিস্টেমে নতুন কোচ থাকবে নির্বাচক কমিটিতে। প্রশ্ন হচ্ছে, সে সময় দল নির্বাচনে নতুন কোচ কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে? কারণ, সে কাউকে চিনবে না, ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে কোন ক্রিকেটারকে নেবে দলে? তখন সেই কোচকে থাকতে হবে নীরব, নয়তো বিরোধিতা করতে হবে র্নির্বাচন নিয়ে। সেটি হবে কোনো ক্রিকেটারকে না জেনে, না চিনেই। সেই সঙ্গে বোর্ড পরিচালকদের প্রভাব তো থাকছেই।
এ বিষয়ে ফারুক বলেন, ‘ধরেন একটি গাছ প্রতিনিয়ত ফল দিচ্ছে, সেটি আরো ভালো ফল দিতে পারবে। আরো ফলের আশায় কি সেই গাছ কেটে নতুন গাছ লাগানো হয়? না, আমার প্রথম কথা হচ্ছে সফল ও কার্যকর একটি সিস্টেম কেন পরিবর্তন করা হচ্ছে? এর আগে আকরাম ছিল, দুর্জয়, আতাহার আলী ছিল, যারা দেশের ক্রিকেটকে ভালোভাবে চিনতো। এখন আমি এবং বাশার আছে, নান্নু আছে, আমরাও দেশের ক্রিকেট ভালোভাবে চিনি। এরপর সাকিব-তামিম-মাশরাফি আসবে, ওরাও ক্রিকেটারদের চিনবে জানবে। ওরা যেমন নতুন এসে চমক দেখিয়েছে, তেমনি ওরাও নতুন নতুন ক্রিকেটারদের খুঁজে বের করবে, যারা দেশের জন্য ভালো কিছু উপহার দিতে পারবে। আমরা কথা হচ্ছে, দল নির্বাচনে যারা সমানভাবে ভূমিকা রাখতে পারবেন, এমন লোকদের নিয়ে কমিটি হতে হবে। এটিই স্বাভাবিক। এর বাইরে গেলে কতটা ভালো হবে আমি জানি না।’
অন্যদিকে নির্বাচক কমিটিতে প্রধান কোচ ও ম্যানেজার থাকার বিষয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমার তো এখানেই প্রশ্ন। কোনো কোচই তো বাংলাদেশে স্থায়ী হবে না। একদিন না একদিন চলে যেতেই হবে। নতুন একজন কোচ যখন বাংলাদেশে আসবেন তখন তার ভূমিকা কী হবে? দল নির্বাচন করতে গেলে তিনি কাকে করবেন? কাকে দলে আনা প্রয়োজন কিভাবে ঠিক করবেন? ধরুন, এখন মুস্তাফিজকে নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। অনেকেই দাবি করেন মুস্তাফিজকে তিনিই আবিষ্কার করেছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, মুস্তাফিজকে প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাঠানোর সিদ্ধান্ত কারা নিয়েছে? আমরা নির্বাচক কমিটি। ক
ারণ, আমরা তাকে দেখেছি, তার প্রতিভাটা কিন্তু আমরা মাঠ থেকেই জানি। এখন যদি প্রধান কোচ না জেনেই কোনো ক্রিকেটারকে বাদ দিতে চান বা দলে রাখতে চান তখন কী হবে?’ এরই মধ্যে এই নতুন পদ্ধতির নির্বাচক প্যানেল নিয়ে ওয়ার্কিং কমিটির প্রধান এনায়েত হোসেন সিরাজের সঙ্গে কথাও বলেছেন প্রধান নির্বাচক। এ বিষয়ে ফারুক বলেন, ‘আমি এরই মধ্যে সিরাজ ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের সব কথা শুনেছেন। এখন অপেক্ষা করছি বোর্ড এই পদ্ধতি পাস করে কিনা। আর আমার পদত্যাগের বিষয়টি অনেক দূরের। আগে দেখি কী হয়, কিভাবে হয়। আমার কথা হলো, কমিটির সংখ্যা যতই হোক, সেখানে যেন এমন কেউ না থাকে যারা দেশের ক্রিকেটারদেরই চিনে না।’ মানবজমিন