সারীফা রিমু: নারী-পুরুষের সমতা আনয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও দায়িত্ব প্রশ্নাতীত। কেননা, এই পৃথিবীকে দেখার চোখ এবং করণীয়ের চিন্তা অনেকাংশে তৈরি করে গণমাধ্যম। কিন্তু বাংলাদেশ যখন একদিকে নারী রাজপথ থেকে সংসদ পর্যন্ত সর্বোত্র দৃশ্যমান, অন্যদিকে ঠিক তখনই সংবাদে নারীর উপস্থিতি দ্রুত কমে এসেছে। অন্যান্য পেশায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও গত এক দশকে সাংবাদিকতায় নারীর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে প্রায় স্থির অথবা হ্রাসমান।
এমন তথ্য উঠেএসেছে জেন্ডার ইন ফোরামের পক্ষে বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট, জার্নালিজম এন্ড কমিউনিকেশন (বিসিডিজেসি) কর্তৃক প্রকাশিত এক পরিবীক্ষণে। যেটি রচনা করেন গীতি আরা নাসরীন। সেখান থেকে আমাদের সময় ডট কম পাঠকের জন্য এর সংক্ষিপ্ত সারণি তুলে ধরা হলো।
সংবাদমাধ্যম কর্মীরা সারা দুনিয়ায় ২০১৫ সালের পঁচিশে মার্চ যখন তাদের দৈনন্দিন খবর প্রকাশ ও প্রচার করছিলেন, ঠিক সেই সময় পঞ্চম বিশ্ব গণমাধ্যম পরিবীক্ষণ প্রকল্পের জন্য পৃথিবীর ১১৪ টি দেশে সেসব খবর বিশ্লেষণ করছিলেন শত শত পরিবীক্ষক।
জেন্ডার বিশ্লেষকের দৃষ্টিকোন থেকে সংবাদ বিশ্লেষণ এবং প্রয়োজনীয় এ্যাডভোকেসির উদ্দেশ্যে নিবেদিত বিশ্ব গণমাধ্যম পরিবীক্ষণ প্রকল্প((এষড়নধষ গবফরধ গড়হরঃড়ৎরহম চৎড়লবপঃ এগগচ ) পৃথিবীতে এ জাতীয় সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা স্বেচ্ছাসেবী একটি গবেষণা প্রকল্প ।
বিশ্বের ৭১ টি দেশে একদিনে সংবাদপত্র, রেডিও ও টেলিভিশন সংবাদ বিশ্লেষণ করার মধ্য দিয়ে একদিনের এই সংবাদ পরিবীক্ষণ শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে মিডিয়া ওয়াচ (১৯৯৫)। পরিবীক্ষণের সময় দেখা যায় খবর যাদের সম্পর্কে এবং খবরে প্রধানত যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে তাদের মাত্র ১৭ শতাংশ নারী। এই পরিবীক্ষণে আরও বোঝা যায়, পৃথিবীর কোথাও সংবাদে জেন্ডার সমতা বিরাজ করে না। নারীকে খবর পড়তে দেখা যায় , কিন্তু খবর তাকে দেখে না।
এর পাঁচ বছর পর ২০০০ সালে পরিবীক্ষণে দেখা যায় পাঁচ বছরে সাংবাদিকতায় নারীর সংখ্যা বেড়েছে না বাড়ার মতো, মাত্র ১ শতাংশ। তাহলে মোট হলো ১৮ শতাংশ। ২০১৫ সালে ১৮ শতাংশ থেকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ শতাংশ ।
সেই প্রথম থেকে বিশ্ব গণমাধ্যম পরিবীক্ষণ থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের পঞ্চম পরিবীক্ষণ সারণির চিত্রটি হয় এমন।
সংবাদপত্র, রেডিও ও টেলিভিশনে নারীর গড় উপস্থিতি ১৮ শতাংশ যা পুরুষের ৮২ শতাংশ। অনলাইনে নারীর গড় উপস্থিতি ২৯ শতাংশ আর পুরুষ ৭১ শতাংশ।
বাংলাদেশে একদশকে যে চিত্রটি পাওয়া যায় তা আরও বেশি আশঙ্কার । সংবাদ প্রতিবেদনে নারীর উপস্থিতি সংবাদপত্র-রেডিও-টেলিভিশনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। সামান্য আশার কথা এই যে অনলাইন সংবাদপত্রের নারীর উপস্থিতি বেশি। বাংলাদেশে যে কয়টি গণমাধ্যমের আধেয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে, সেখানে তুলনামূলকভাবে অধিকতর সংবেদনশীলতা দেখা গেছে। শতকরা একভাগ ক্ষেত্রে হলেও সংবাদে নারী বিষয়ক নীতিমালা এবং আইনের উল্লেখ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশে জেন্ডার অবস্থানের নিরিখে গণমাধ্যমের নিয়মিত পরিবীক্ষণ নেই বললেই চলে। যদিও প্রায়শই বিভিন্ন বক্তৃতা ও লেখায় নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলের ওপর জোর দেওয়া হয়। সমাজে যে প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে, বর্তমানে পৃথিবীতে গণমাধ্যম তার অন্যতম প্রধান অংশ। তাই এ পেশায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়লে সাংবাদিকতায় নারীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বাড়বে নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ, সাথে সৃষ্টি হবে সঠিক মত প্রকাশেরও ।