আরিফুর রহমান : আবারো আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প অগ্রাধিকার তালিকায় নিয়ে এসেছে ভারত। কংগ্রেস সরকারের সময় এটি বন্ধ থাকলেও বিজেপি, আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে প্রকল্প বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগের ফলে চরম বিপর্যয়ের পরবে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সংস্থার দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ তাদের।
বিতর্কীত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের ভারতের সাথে অভিন্ন ৫৪টি নদ-নদীর মধ্যে ৩০টি নদীর সাথে রয়েছে বাংলাদেশের সংযোগ। পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র রয়েছ এই প্রকল্পে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন নদীর গতি পরিবর্তন আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
নদী আইন বিশেষজ্ঞ ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘ভারত গঙ্গা নদী চুক্তি লঙ্ঘন করছে, আন্তর্জাতিক নদী সংক্রান্ত যে প্রথাগত আইন রয়েছে সেটা লঙ্ঘন করছে। অত্যন্ত শক্তভাবে ভারতের কাছে প্রতিবাদ জানিয়ে বলতে হবে আমাদের আন্তর্জাতিক যে নদীগুলো রয়েছে সেগুলোর পানি একতরফাভাবে ব্যবহার করা যাবে না। অন্য দেশের ক্ষতি হয় এরকম কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না’।
অথচ ৯৬ সালের গঙ্গা চুক্তির ৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ন্যায়পরায়ণ, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং বাধা না দেয়ার শর্তে নদীর পানি ব্যবহার করবে দুই দেশ। পাশাপাশি জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক পানি প্রবাহ কনভেনশনের সাত অনুচ্ছেদ এবং হেলসিংকি নীতিমালার ৪ ও ৫ অনুচ্ছেদে ভাটির দেশের কোন ক্ষয়ক্ষতি না করে সমঝোতার মাধ্যমে পানি ব্যবহারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক নদীগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণ এবং প্রকল্পের ফলে পানির সাথে পলি আসা কমে যাবে। এতে মাটি ক্ষয় হয়ে বাংলাদেশের ভূমি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বুয়েটের পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. মুনসুর রহমান বলেন, ‘গত ৫০- ৬০ বছরে, প্রতি বছর আমাদের ৫ থেকে ৭ মিলিয়ন মেট্রিকটন পলির পরিমাণ কমছে। যদি আন্তঃনদী সংযোগেরমত এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে পানি বাধাগ্রস্থ হয়। পানি এবং পলির পরিমাণ এখন আমাদের দেশে ধীরে ধীরে কমছে। সেটা আরও বেশি পরিমাণ কমবে যদি আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়।
পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। দিল্লিতে একটা সেমিনারে ভারতের পানি সম্পদমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে’।
দ্রুত আন্তর্জাতিক ফোরামে নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি তুলে ধরার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। বাংলাদেশে নদী-নালাগুলোর অবস্থা এমনিতেই প্রায় মরণ দশা। তারপরে যুক্ত হচ্ছে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প। যার কারণে পরিস্থিতি হয়ে উঠতে পারে আরও ভয়াবহ।
সূত্র: যমুনা টিভি.