আনিসুর রহমান তপন : ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিজেদের অর্থায়নে ত্রিপুরা সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের চূড়ান্ত প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। ৪১২ মিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১ কোটি ৪৪ লাখ রুপী। এ অর্থ অনুদান হিসেবে দেবে ভারত। এর নাম দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত ১ম মৈত্রী সেতু। এটি নির্মাণ করবে ভারতের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরই এর নির্মাণ শুরু করা হবে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ভারতের মিনিস্ট্রি অব এক্সটার্নার অ্যাফেয়ার্স। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যবিষয়ক যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ ২০১৪ সালের ১২-১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত ৯ম বৈঠকে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রস্তাব করে। এতে ভারতের সাবরুম ও বাংলাদেশের রামগড়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হবে। দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্পটির বিস্তারিত প্রস্তাবের (ডিপিআর) তথ্যমতে, চার লেনের সেতুটির মূল দৈর্ঘ্য ৮০ মিটার ও ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) ৩৩২ মিটার। মোট ৪১২ মিটার সেতু নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ভারতের দিকে ২২৫ মিটার ও বাংলাদেশের দিকে ২৮৩ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করবে ভারত। ত্রিপুরার পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। বাংলাদেশের কারিগরি কমিটি এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণে চূড়ান্ত প্রস্তাব দিয়েছে ভারত সরকার। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ভারতই বহন করবে। দেশটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটি বাস্তবায়ন করবে। এতে সহায়তা করতে ৫ সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সেতুটির বাংলাদেশ অংশের সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে দেয়া হবে। এছাড়া সংযোগ সড়ক থেকে রামগড়-খাগড়াছড়ি জেলা সড়কের সঙ্গে প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি রামগড়-খাগড়াছড়ি সড়কের ৪টি সেতু পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ-ভারত ১ম মৈত্রী সেতুটির কার্যকরি ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ত্রিপুরা রাজ্যে পণ্য পরিবহনে বহুদিন ধরেই ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করতে চাইছে ভারত। এজন্য সেতুটি নির্মাণে ২০১১ সালে ভারতকে প্রাথমিক অনুমতি দেয়া হয়। আর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয় গত বছর। সেতুটি নির্মাণে যৌথ জরিপ কাজ পরিচালনায় গত বছর স্থানীয় কমিটি গঠন ও উচ্চ পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠনও করা হয়। এ কমিটি সেতু নির্মাণকালীন ভারতের সঙ্গে সমন্বয়, ভারতের ঠিকাদার ও প্রকৌলশীদের প্রবেশের অনুমতি, পরিবেশ ছাড়পত্র এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় দেখভাল করবে।
উল্লেখ্য, সেতুর ভারতীয় অংশে ত্রিপুরার রাজ্যের সাবরুম সীমান্ত। এপারে বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় সীমান্ত। সেতুটির বাংলাদেশ প্রান্তে একটি স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। সেতু নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এর দূরত্ব হবে মাত্র ৭২ কিলোমিটার। ফলে উপকূলীয় নৌ-চলাচল চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করলে সেখান থেকে খালাস করা পণ্য দেশটির ত্রিপুরা রাজ্যে নিয়ে যেতে সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সম্পাদনা : বিশ্বজিৎ দত্ত