নোমান বিন আরমান : বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনায় অনন্য নজির গড়েছেন সিলেটের সংসদ সদস্যরা। এপর্যন্ত উপস্থাপিত ৫৩টি জাতীয় বাজেটের মধ্যে ২৭টি উপস্থাপন করেছেন সিলেটের তিন সাংসদ ও অর্থমন্ত্রী।
এরমধ্যে সর্বাধিক বাজেট উপস্থাপনের একক রেকর্ড রয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য মরহুম এম সাইফুর রহমানের। তিনি ১২বার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেছেন। ৯বার দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ছয়বার বাজেট উপস্থান করে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন গ্রেনেড হামলায় নিহত শাহ এ এম এস কিবরিয়া।
আগামী বৃহস্পতিবার (২ জুন) ২০১৬-২০১৭ সালের (আর্থিক বছর-২০১৭) জাতীয় বাজেট পেশ করবেন। এটি হবে দেশের ৪৫তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর ১০ম এবং সিলেট বিভাগ থেকে নির্বাচিতদের ২৮তম বাজেট। দশম বাজেট উপস্থাপন করলে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের গড়া রেকর্ড থেকে আর মাত্র দুই ধাপ দূরে থাকবেন।
১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে সাত কোটি বাঙালির জন্য ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ হয়। প্রায় ১৬ কোটি মানুষের জন্যে আগামী বাজেটের আকার হবে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী মুহিতের প্রথম বাজেট ছিল ১৯৮২-৮৩ সালে। তখন রাজস্ব আয় ছিল মোট ২৭১০ কোটি টাকা আর মোট সরকারি ব্যয় ছিল ৪৪১১ কোটি টাকা। পরবর্তী বাজেটের আকার ছিল ৫২১৭ কোটি টাকা। ছাব্বিশ বছর পর তাঁর প্রথম বাজেট (২০০৯-’১০) হলো ১,১১,৫০০ কোটি টাকার বাজেট। ১৯৮৩-৮৪ তে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ ছিল জাতীয় আয়ের ৯ শতাংশ আর ২০০৯-’১০ এ এটা হলো মাত্র ২ শতাংশের কাছাকাছি।
বাজেট পেশের দিক থেকে বিএনপি প্রয়াত শীর্ষ নেতা এম সাইফুর রহমানের রেকর্ডটি সবচেয়ে বড়। তিনি বাজেট দিয়েছেন ১২টি। এর ১০টি খালেদা জিয়ার শাসনামলে। এবং বাকি দুটির একটি জিয়াউর রহমানের ও অপরটি বিচারপতি এম এ সাত্তারের শাসনামলে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগের বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই নিয়ে তিনি বাজেট দিলেন ৯টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের হয়ে ৭টি এবং জাতীয় পার্টির হয়ে ২টি। তৃতীয় সর্বোচ্চ বাজেট দেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত তিনি ছয়টি বাজেট পেশ করেন।
দেশের ২০১৫-১৬ সালের (আর্থিক বছর-২০১৬) বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী মুহিত অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর গুরুত্বারোপ করে ধ্বংসাত্মক ও রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ড হতে বিরত থেকে সরকারের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপে সমর্থন জানাতে বিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রায় সমাপ্য চলতি অর্থ বছর কোনরকম রাজনৈতিক বৈরী পরিস্থিতির মুখে পড়েনি। এ সময়ে রেকর্ড পরিমাণ রিজার্ভ, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জিডিপি অর্জন ও মুদ্রাস্ফীতির নিম্ন হারের মাধ্যমে অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন যে ২০১৯-২০২০ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি পর্যায়ক্রমে ৮ শতাংশে উন্নীত হবে। অবশ্য তিনি একথাও বলেছিলেন যে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কিছু অসমাপ্য লক্ষ্যগুলোর প্রতি অধিকতর নজর দেয়া প্রয়োজন। এই প্রেক্ষাপটে মুহিত অধিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে পরবর্তী বাজেট বক্তৃতায় একটি রোড ম্যাপ উপস্থাপন করবেন।
তিনি ইতোমধ্যে আভাষ দিয়েছেন যে আগামী বাজেটের আকার হবে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এতে কিছু মেগা প্রকল্পে অর্থায়নের বিধান এবং উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বর্ধিত বরাদ্দ থাকবে। পরবর্তী বাজেটে দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যের অনুসরণে অন্যান্য বিশেষ দিকও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আসন্ন বাজেটে দেশে রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারের প্রস্তাব থাকবে। এ বাজেটে সরকার যাতে অধিক আভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারে এবং বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের বেশী না হয় সে জন্য নতুন মূল্য সংযোজন আইন ও কাস্টম আইন চালু এবং রাজস্ব বোর্ডের প্রধান প্রধান কর্মকাণ্ড অটোমেশনের প্রস্তাব থাকবে।
এতে সম্ভব্য করদাতাদের করের আওতায় এনে কর পরিধি বাড়ানোর কৌশল থাকবে। বর্তমানে ১৭ টিআইএনধারীর মধ্যে প্রায় ১২ লাখ আয়কর বিবরণী দাখিল করেন। আগামী ৪ বছরে সক্রিয় এ করদাতা ৩০ লাখে উন্নীতের পরিকল্পনা রয়েছে। পূর্ববর্তী বছরের মতো এবারও বাজেট পাওয়ার পয়েন্টে মাধ্যমে উপস্থাপিত হবে এবং তা অর্থ বিভাগের ওয়েব সাইটে পাওয়া যাবে। অর্থমন্ত্রী ৩ জানুয়ারি শুক্রবার ওসমানী মিলনায়তনে বাজেট পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করবেন।