ডেস্ক রিপোর্ট : বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিসিবি একাডেমি ভবনে ঢুকেই নিরাপত্তাকর্মী হাবিবকে জড়িয়ে ধরলেন মুস্তাফিজুর রহমান। বহুদিন পর কাল এলেন একাডেমি ভবনে। গত ৫ এপ্রিল রওনা হয়েছিলেন আইপিএল খেলতে। প্রায় দুই মাস পর আবারও যখন প্রিয় ঠিকানায় ফিরলেন, মুস্তাফিজের মুখে খুশির ঝিলিক।
পরশু রাতে ঢাকায় পৌঁছেই জানিয়েছিলেন কাল আসবেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয়ে। দেখা করবেন জাতীয় দলের ফিজিও বায়েজিদুল ইসলামের সঙ্গে। বিসিবিতে এসেই তাই চলে গেলেন ফিজিওর কক্ষে। একটু পরে সেখানে উপস্থিত বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী। আইপিএল ফাইনালের আগে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়েছিলেন মুস্তাফিজ। সেই চোটের অবস্থা বুঝতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সবাই।
প্রায় দেড় ঘণ্টা পর একাডেমি ভবন থেকে মুস্তাফিজ গেলেন বোর্ড কার্যালয়ে। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগে ঢুঁ মারার আগেই দেখা হয়ে গেল দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন ও হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। নির্বাচকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় শেষে মিডিয়া ম্যানেজারের রুমে উঁকি দিয়ে দেখা পেলেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার। মুস্তাফিজকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন মাশরাফি। বিসিবিতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা কাটিয়ে বেলা দুইটার দিকে এমআরআই করাতে ছুটলেন অ্যাপোলো হাসপাতালে। এমআরআই রিপোর্ট পাওয়ার কথা আজ।
গত পাঁচ মাসে এ নিয়ে তিনবার চোটে পড়লেন মুস্তাফিজ। নভেম্বরে বিপিএল খেলার সময় বাঁ কাঁধে ব্যথা অনুভব করেন। গত জানুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি হোম সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচ সে জন্য খেলতেই পারলেন না। এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চোট পান ডান পাঁজরে। এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অনেকটা সময় তাই ছিলেন দলের বাইরে।
এবারের চোট কতটা গুরুতর? মুস্তাফিজ কি পারবেন সাসেক্সের হয়ে কাউন্টি খেলতে? ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও কি দেখা যাবে তাঁকে মোহামেডানের তাঁবুতে? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তরই পাওয়া গেল না। মুস্তাফিজ তো কথাই বললেন না, ফিজিও-চিকিৎসকের মুখেও তালা। সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়ালেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী। তবে স্পষ্ট কিছু জানা গেল না তাঁর কথা থেকেও, ‘ও কাল (পরশু) আইপিএল থেকে ফিরেছে। আমরা তাকে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিচ্ছি। ফিজিও-চিকিৎসকেরা তার ফিটনেস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। সামনে আরও দেখা হবে। এসবের রিপোর্ট দেখেই বুঝতে পারব কীভাবে এগোব।’
কাউন্টি দল সাসেক্সের অধিনায়ক লুক রাইট কদিন আগে জানিয়েছেন, ১০ জুন হোভে অনুষ্ঠেয় ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে কেন্টের বিপক্ষে ম্যাচে মুস্তাফিজকে চান তাঁরা। তবে রাইটের চাওয়াই সব নয়। কাল করানো এমআরআই রিপোর্ট, জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মতামত এবং মুস্তাফিজের নিজের ইচ্ছার ওপরই বেশি নির্ভর করছে তাঁর কাউন্টিতে যাওয়া না-যাওয়া।
কাল সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা চলে গেছেন মুস্তাফিজ। বিশ্রামে থাকবেন সপ্তাহ দুয়েক। আইপিএলে শরীরের ওপর দিয়ে বড় ধকল গেছে। খাওয়াদাওয়ায় উল্টাপাল্টা হওয়ায় ওজনও কমে গেছে প্রায় দুই কেজি। তবে শারীরিক সমস্যার চেয়ে দুই মাসের মতো পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় মানসিক অবসাদেই বেশি ক্লান্ত ‘কাটার মাস্টার’। কিছুদিন ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার ইচ্ছার কথাটা নাকি ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেনও। প্রিমিয়ার লিগে খেলার কোনো ইচ্ছা নেই তাঁর। অবশ্য মোহামেডান বলছে, মুস্তাফিজকে আপাতত ‘ছাড়’ দিলেও সুপার লিগের আগে ফিট হলে তাঁকে অবশ্যই দলে চাইবে তারা। প্রথম আলো