মনজুর আহমেদ অনিক,নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে ধর্ম নিয়ে কটূক্তি ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত পুলিশের একটি তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তিন সদস্যের পরিদর্শন দলে ছিলেন অতিরিক্ত ডিআইজি মাহবুবুর রহমান, পিবিআই শাখা ঢাকার অতিরিক্ত এসপি মোস্তফা কামাল ও পুলিশ সদর দপ্তরের এএসপি সাদিরা খাতুন। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের পরিদর্শক মাহবুবুল আলম ও বন্দর থানার (ওসি) আবুল কালাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত দল পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষকরা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তদন্ত দলের কাছে বক্তব্য দেন। এরপর তদন্ত দল পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ ছাত্র ও ১০ ছাত্রীর কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করেন।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত ডিআইজি মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। আরো তদন্ত চলবে। এই মুহূর্তে বিস্তারিত প্রকাশ করা ঠিক হবে না। সময় মত মিডিয়াকে জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩মে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টার পিয়ার সাত্তার লতিফ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করার অপপ্রচার করে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলাম জেলা জাতীয় পাটির সভাপতি আবু জাহের, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিদ্যালয়ের ভেতরে মারধর করে। পরে জাতীয় পার্টির নেতা আবু সুফিয়ানের নেতা ভাতিজা টগর মসজিদের মাইকে ঘোষণা করে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করেছে। মহুত্বের মধ্যে শতশত গ্রামবাসী ও বহিরাগত কিছু লোক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের রুমে প্রবেশ করে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে গণধোলাই দেয়। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য¡ সেলিম ওসমান বিকাল ৪ টার বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে হাজার হাজার জনতার সমানে কান ধরে উঠবস করান। এ ঘটনায় গত ১৮ মে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা সংশ্লিষ্টদের ৩ দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে বলা হয়।
আইনজীবী খলিলুর রহমান ও মহসিন রশিদ পত্রিকায় প্রকাশিত শিক্ষকের কান ধরে উঠ-বস করার ঘটনায় প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। এরপর আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে এ রুল জারি করেন।
এদিকে ২৬ মে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের কাছ থেকে জোর করে স্কুল পরিচালনা পর্ষদ স্বাক্ষর পদত্যাগপত্রে শিক্ষকের স্বাক্ষর নেয় বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি আদালতকে জানায়।