আমিন ইকবাল : ইসলামে অন্যতম ফরজ বিধান জাকাত। পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির একটি জাকাত। নিসাব পরিমাণ মালের অধিকারীর জন্য জাকাত প্রদান করা আবশ্যক। তবে জাকাত যে কাউকে ইচ্ছে করলে দেয়া যাবে না। গরিব-এতিম-মিসকিন ইত্যাদি শ্রেণির লোকদের জাকাত দিতে হবে। নিচে তিনটি মাসয়ালার মাধ্যমে জাকাত দেয়া যাবে নাÑ এমন কয়েকটি ক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো।
মাসয়ালা-১ : নিজ পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, অর্থাৎ জাকাত দাতার সকল পিতৃকূল ও মাতৃকূলের সকল ঊর্ধ্বতন নারী-পুরুষকে জাকাত দেয়া যবে না। ঔরসজাত ছেলে- মেয়ে, নাতী- নাতনি, পরনাতি-পরনাতনি, অর্থাৎ নিজের অধস্তন সকল নারী-পুরুষকে জাকাত দেয়া যাবে না।
স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে জাকাত দিতে পারবে না। এছাড়া অন্য সব দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনকে জাকাত দেয়া যাবে। যেমনÑ ভাইবোন, চাচা-ফুফু, মামা-খালা, শ্বশুর-শাশুড়ি, সৎ মা-সৎ বাবা, জামাতা, পুত্রবধূ ইত্যাদি। [হদায়া : ১/২০৬]
জাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নিকটাত্মীয়দের জাকাত দেয়া উত্তম। [রদ্দুল মুহতার : ৩/২৯৩, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৯০, মারাকিউল ফালাহ : ৫৯৪]
মাসয়ালা-২ : যে ব্যক্তির কাছে জাকাতযোগ্য সম্পদ নেসাব পরিমাণ নেই, কিন্তু অন্য ধরনের সম্পদ, যাতে জাকাত আসে না, যেমন ঘরের আসবাবপত্র, পরিধেয় বস্ত্র, জুতা ইত্যাদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ও নেসাবের সমমূল্য পরিমাণ আছে, তাকে জাকাত দেয়া যাবে না। [বাদায়েউস সানায়ে : ২/১৫৮]
মাসয়ালা-৩ : জাকাতের টাকা কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা যাবে না। ব্যয় করা হলে জাকাত আদায় হবে না। যেমনÑ রাস্তাঘাট, পুল নির্মাণ করা, কূপ খনন করা, বিদ্যুৎ-পানি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। কেননা শরিয়তে জাকাতের বিধান দেয়া হয়েছে ব্যক্তির প্রয়োজন পূরণের জন্য; সামাজিক প্রয়োজন পূরণের জন্য নয়। জাকাতের টাকা দ্বারা মসজিদ-মাদরাসার বিল্ডিং নির্মাণ করা, ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যয় করা, ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা দেয়া, ওয়াজ-মাহফিলের জন্য ব্যয় করা বা এগুলোতে সহায়তা দেয়া, মিডিয়া তথা রেডিও, টিভি চ্যানেল করা জায়েজ নয়; বরং জাকাতের টাকা তার হকদারকেই মালিক বানিয়ে দিতে হবে। অন্য কোনো ভালো খাতে ব্যয় করলেও জাকাত আদায় হবে না। [মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক : হাদিস নং ৬৯৪৭, রদ্দুল মুহতার : ২/৩৪৪]