মমিনুল ইসলাম: সোমবার বসছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের পরবর্তী অধিবেশন। এ বৈঠককে সামনে রেখে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় জরুরি ও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে কাউন্সিলের কাছে লিখিতভাবে যৌথ প্রস্তাবনা দিয়েছে ১৯টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও সাংবাদিক সংগঠন।
গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক এ সংগঠনগুলো হলো- পিইএন ইন্টারন্যাশনাল, কানাডিয়ান জার্নালিস্ট ফর ফ্রি এক্সপ্রেশন, সেন্টার ফর ইনকুয়্যারি, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট, ড্যান্সক পিইএন, ইংলিশ পিইএন, ইউরোপিয়ান হিউম্যানিস্ট ফেডারেশন, ফিনিশ পিইএন, ফ্রিমিউজ, আইসল্যান্ডিক পিইএন, ইন্ডেক্স অন সেন্সরশিপ, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান অ্যান্ড ইথিকেল ইউনিয়ন, ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন, নর্স্ক পিইএন, পিইএন আমেরিকা, পিইএন বাংলাদেশ, পিইএন মেলবর্ন, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ও পিইএন সুইডেন।
কাউন্সিলে জমা দেয়া চার পৃষ্ঠার বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সম্প্রতি বছরগুলোতে মতপ্রকাশ, সভা-সমিতির স্বাধীনতা এবং ধর্ম বা বিশ্বাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে গুরুতর পতন দেখা গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের মিত্রদের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। যা গভীরভাবে গেড়ে বসেছে। বাংলাদেশের স্পন্দনশীল সুশীল সমাজ হুমকির সম্মুখীন বলে উল্লেখ করা হয় এতে।
প্রস্তাবনায়, বাংলাদেশে আইনগত পরিবর্তন, দুর্বল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় সরকারের সমর্থনের অভাব, স্বাধীন গণমাধ্যমকে খাঁটো করার প্রচেষ্টা ও মানবাধিকারের ভুক্তভোগীদের আশ্রয় প্রদানে ত্রুটিপূর্ণ বিচার ব্যবস্থার কথা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, এসব বিষয় হত্যা, কারারুদ্ধ, অথবা নির্বাসনের মধ্য দিয়ে ভিন্নমতের কণ্ঠরোধে অবদান রাখছে।
১৯ সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ প্রবণতা বদলাতে জরুরি ও দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন। যাতে করে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অন্যান্যের মতাদর্শ নিয়ে নিরাপত্তা সহকারে বিতর্ক ও আলোচনা করার পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়। পাশাপাশি এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে সুশীল সমাজকে শ্রদ্ধা করা হবে এবং তারা সরকারের জবাবদিহিতা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের কিছু সংশোধনীর কড়া সমালোচনা করে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে পাস করা আইনের পশ্চাদগামী সংশোধন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এছাড়া এ ধরনের অন্যান্য খসড়া আইন বিবেচনাধীন রয়েছে। বাংলাদেশের সুশীল সমাজ আইন সংস্কারে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মৌলিক অধিকার কিভাবে ঝুঁকির মুখে রয়েছে তা তুলে ধরেছেন তারা।
বিবৃতিতে সমস্যাজনক আইন-কানুন হিসেবে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়। মানহানী, রাষ্ট্রদ্রোহী এবং আইসিটি আইনের ত্রুটি তুলে ধরে তা সংশোধনের পরামর্শ দেয়া হয়।
এদিকে, সোমবার আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠন সিপিজে’র নিজস্ব ওয়েবসাইটে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার ও প্রকাশক খুন হয়েছে। এসব ঘটনায় একজনকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। যা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে। মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো অব্যাহতভাবে হুমকির সম্মুখীন বলে অভিযোগ করা হয়।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল এজেন্ডার আইটেম চার এর অধীনে এ প্রস্তাবনা করা হয়। এ আইটেম অনুযায়ী, কাউন্সিল অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা খতিয়ে দেখতে পারে।