কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্ত প্রতিবেদনেও মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। এতে করে বিভিন্ন মহলে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরাও এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এটি একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা এখনো মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে পারিনি।
এদিকে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা ঘটনার পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে পুলিশকে অধিকতর তদন্তের পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া মৃত্যুর আগে ধর্ষণ নয় তার সঙ্গে ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাবেক পরামর্শক ও বর্তমানে ভারত, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া ও সুদানের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত এবং ইন্দো প্যাসিফিক এসোসিয়েশন অব ল মেডিসিন এন্ড সায়েন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, যদি শরীরের কোনো অংশে, বিশেষ করে হাড়ে কোনো ইনজুরি থাকে তাহলে তৃতীয় দফা ময়না তদন্ত করে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। মৃত্যুর ২৫ বছরের মধ্যে ময়না তদন্ত করলেও মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করা সম্ভব। তবে অন্য কোনো ইনজুরির ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়।
জানা গেছে, এতদিন ডিএনএ রিপোর্টের কারণে তনুর ময়না তদন্তের প্রতিবেদন দিতে দেরি হয়। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন, ডিএনএ প্রতিবেদনের সঙ্গে মৃত্যুর কারণের কোনো সম্পর্ক নেই।
অন্যদিকে সিআইডি পুলিশ এতদিন বলেছে, তনুর খুনিদের শনাক্ত করা হয়েছে। তবে কিছু কারণে খুনিদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। ময়না তদন্তের প্রতিবেদনের কারণেই তনুর হত্যা রহস্য ঝুলে রয়েছে। তবে দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্তের প্রতিবেদন দেওয়ার পরেও এই হত্যা রহস্যের জট খুলেনি।
এছাড়া গলিত লাশের সেল পচে যায় বলে ডিএনএ পরীক্ষা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের নিয়ম হলো প্রথমে লাশের দেহ থেকে সংগৃহীত কাপড় শুকিয়ে নিতে হবে। পরে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।
তবে তনুর হত্যাকা-ের ঘটনায় প্রথম দফা ময়না তদন্তের ক্ষেত্রে এসব সম্ভব ছিল। দ্বিতীয় ধাপে এসব সম্ভব ছিল না বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এছাড়া তনুর শরীরে তিনজনের আলামত পাওয়া গেছে বলা হয়েছে। এর মানে হচ্ছে ধর্ষণে তিনজন অংশ নিয়েছে। এই তথ্যেও গরমিল লক্ষ্য করা গেছে। এসবের কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
ইত্তেফাক থেকে নেয়া