আবারও ‘বোমা মেশিন’ দিয়ে ধলাই থেকে পাথর উত্তোলন!
ফাইল ছবি
কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে ধলাই সেতুর পাদদেশে আবারও বোমা মেশিন বসিয়ে পাথর উত্তোলনে সক্রিয় পাথর খেকোরা।
সচেতন মহল মনে করেন, ধলাই সেতু এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতু। সিলেটের দীর্ঘতম এ সেতুটির কারণে নদীর পূর্বপাড়ের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সেতুটিকে ঘিরে এখানে শতাধিক ক্রাশার মিল গড়ে ওঠে। ফলে ব্যবসা বাণিজ্যে গতি আসে। পাথর পরিবহনসহ জনসাধারণের যাতায়াত সহজতর হয়। পাথর খেকোদের লোলূপ দৃষ্টির কারণে সেতুটি ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে।
সিলেট জেলা প্রশাসক মো: জয়নাল আবেদীন গত রাতে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, সোমবার রাতেই তিনি এ নিয়ে কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও’র সাথে কথা বলেছেন। ইউএনও আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান। তিনি বলেন ধলাই সেতু একটি সরকারি স্থাপনা। ভোলাগঞ্জে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যকলাপ প্রতিরোধে পাশাপাশি সরকারী স্থাপনা রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
কোম্পানীগঞ্জের ওসি বায়েছ আলম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আমি প্রশাসনকে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। ইউএনও’র নির্দেশনা পেলে তিনি এ বিষয়ে অভিযান চালাবেন বলে জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে অন্তত ৫০ টি বোমা মেশিন দিয়ে ধলাই সেতু ঘেঁষে ‘বোমা চ্ক্র’ নির্বিঘ্নে পাথর উত্তোলন করে চলেছে। মেশিনগুলো ৮০ থেকে ১২০ ফুট পর্যন্ত নদীর গভীর তলদেশ থেকে পাথর উত্তোলন করছে। আর ২-১ দিন গেলে বোমাচক্র একেবারে সেতুর কাছাকাছি চলে আসতে পারে। এ কারণে কোম্পানীগঞ্জে পূর্ব ও পশ্চিম অংশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে স্থানীয়দের আশংকা।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে আরো জানা যায়, এলাকাবাসী ভোলাগঞ্জ সেতু ঘেঁষে পাথর উত্তোলন বন্ধ দাবীতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেতু ঘেঁষে পাথর উত্তোলন বন্ধ না হলে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেবেন। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে মানববন্ধনেরও আয়োজন করা হবে।
উল্লেখ্য, ১৭ এপ্রিল এ নিয়ে স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় ২শ’ গজের মধ্যে নিষিদ্ধ ‘বোমা মেশিন’ দিয়ে পাথর উত্তোলন “ঝুঁকির মুখে ধলাই সেতু” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন ভোলাগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। তবে অভিযানের পর পরই সেতুর একেবারে নিকটে ফের অর্ধশতাধিক মেশিন বসানো হয়। দিন-রাত সমানতালে চলতে থাকে এসব মেশিন। ১৯ এপ্রিল আরেকটি রিপোর্ট হয়। কিন্তু এরপরও সেতু এলাকায় পাথর উত্তোলন অব্যাহত রাখে বোমা চক্র। উপজেলা প্রশাসনের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ এবং সংশ্লিষ্টদের ‘দায়িত্বহীনতা’র কারণে বোমা সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠে। প্রশাসনের এমন ‘নিরবতা’ জনমনে রহস্যের জন্ম দেয়। বিষয়টি জানতে চাইলে সেতু রক্ষার দায়িত্ব ‘সওজ’ কর্তৃপক্ষের বলে দাবি করেন ইউএনও। পরে ২১ এপ্রিল ধলাই সেতু ঘেঁষে পাথর উত্তোলন অব্যাহত, রক্ষার দায়িত্ব ‘সওজ’ কর্তৃপক্ষের- দাবি ইউএনও’র শিরোনামে আরও একটি রিপোর্ট প্রকাশ হলে সেতু এলাকা থেকে মেশিনগুলো পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেয়া হয়। তবে, সপ্তাহ দুয়েক পর কৌশল পাল্টে রাতের আঁধারে যন্ত্র দানব দিয়ে পাথর উত্তোলন শুরু হয়। এ অবস্থায় কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মেশিনগুলো উঠিয়ে দেয়। এরপর সেতুর নিকটে কোনো মেশিন বসানো হয়নি। তবে কিছুদিনের নিরবতা ভেঙ্গে আবারও সেতুর পাদদেশে ‘নিষিদ্ধ’ বোমা মেশিন বসিয়ে পাথর উত্তোলন শুরু করেছে সুবিধাবাদী চক্র। এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতু ধলাই আজ হুমকিতে।