গাজী মিরান : মানবতা কমিশনের বর্তমান বিদ্যমান আইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ভুক্তভোগীর যে কোনো অভিযোগ দেখভাল, অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিবেদন গ্রহণ ও এর প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করতে পারে জামাকন। কিন্তু পুলিশ বা র্যাব বাহিনীর কোনো সদস্য মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে বা তাদের বিরুদ্ধে কমিশনে কোনো অভিযোগ এলে তা তদন্ত করতে পারে না। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধ তদন্তের অনুমতি চায় সংবিধিবদ্ধ এ প্রতিষ্ঠানটি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন দাবির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের মতে, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বেশি অভিযোগ ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে। বিশেষ করে পুলিশ ও র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অহরহ। এমনকি কমিশনের দপ্তরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ জমা পড়ে তার বেশিরভাগই পুলিশ ও র্যাবের বিরুদ্ধে। কিন্তু অভিযোগের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক তদন্ত করতে পারে না জামাকন। বড়জোর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন চাইতে পারে এ প্রতিষ্ঠান।
কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের মতে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় তবে মানবাধিকার রক্ষা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে বিচারের ক্ষেত্রে তা সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বিদ্যমান আইনের ১৮ ধারার অধীনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা এর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত অভিযোগের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত নয়। এ বিষয়ে কমিশন সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে শুধু প্রতিবেদন চাইতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা দাবি করেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত অপরাধ তদšন্ত করার ক্ষমতা দেয়া উচিত।
সূত্র জানায়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, নিবর্তনমূলক আটক, আটকাবস্থায় নির্যাতন বা মৃত্যু এসব ঘটনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তদন্তসাপেক্ষে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ এবং বিশেষ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কী ধরণের ব্যবস্থা বা শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এসব তথ্য সরবরাহ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে জামাকন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কমিশন নিজে তদন্ত করতে পারে না।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কাজী রিয়াজুল হক বলেন, আমাদের কাছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ আসে তার বেশিরভাগই পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পেলে আমরা তা তাৎক্ষণিক তদন্ত করতে পারি। কিন্তু পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে আমরা সরাসরি তদন্ত করতে পারি না। এক্ষেত্রে কমিশনের বিদ্যমান আইনের ১৮ ধারা একটি বাধা বলে আমরা মনে করি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একজন সদস্য বলেন, আমাদের দেশে পুলিশ, র্যাব সদস্যদের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেশি ঘটে। কিন্তু সেক্ষেত্রে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় ওই বাহিনীর কর্মকর্তাদের। ফলে তদন্ত কার্যক্রম বিঘিœত ও প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।