মাওলানা মহিউদ্দীন ফারুকী : সহিহ হাদিসের ভাষ্যমতে পুরো শাবান মাসই ফজিলত ও মহাগুরুত্বের দাবি রাখে। রমজানের পূর্ণ ফজিলত প্রাপ্তি ও পুণ্য অর্জনের প্রস্তুতিও এ মাসেই নেওয়া প্রয়োজন। তাই রাসুল সা. এমাসে অধিক পরিমাণে রোজা রেখে রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতেন। তিনি বলতেন, ‘এটি এমন মাস যা রমজান ও রজবের মাঝামাঝি হওয়ায় মানুষ এক্ষেত্রে অনেক অবহেলা করে। এ মাসের আমলগুলো আল্লাহ তায়ালার কাছে পাঠানো হয় হয়। আমি চাই যেন রোজা অবস্থায় আমার আমল প্রেরিত হয়।’ তবে শাবানের মধ্য রজনী তথা ১৫ শাবানের রাতকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়। একদিকে কিছু মানুষ এ রাতের অনেক ফজিলত বর্ণনা করে বিভিন্নভাবে ইবাদতের কথা বলে থাকেন। এক্ষেত্রে শরিয়তে নেই এমন কাজও তাদের অনেকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। অন্যদিকে বর্তমানে অনেককেই বিষয়টিকে একেবারে বানোয়াট, বেদাত ও ভিত্তিহীন বলতে দেখা যায়।
মূলত প্রান্তিকতা বাদ দিয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বনই ইসলামের শিক্ষা। এক্ষেত্রে আমাদের প্রান্তিকতা মুক্ত হতে হবে। ভারসাম্যতার পরিচয় দিতে হবে। মধ্য শাবানের রজনী বা শবে বরাতের ক্ষেত্রে সঠিক ও প্রান্তিকতামুক্ত মত হচ্ছে, এ রাতের ফজিলত সহিহ হাদিসে প্রমাণিত। অন্য সব সাধারণ রাতের মত মনে করা এবং এ রাতের ফজিলতকে অস্বীকার করা ভুল।
এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে মুআজ ইবনে জাবাল রা. বর্ণিত হাদিসে রাসুল সা. বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন। সহিহ ইবনে হিব্বান
এছাড়াও কিছু হাদিস এ রাতের ফজিলতের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। তাই এ রাতে দীর্ঘ সেজদার মাধ্যমে নামাজ আদায় করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, অধিক পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করা, দুরুদ শরিফ পড়া ও দুয়া করাসহ বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাত প্রত্যাশা করা যেতে পারে। আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করা যেতে পারে। এছাড়া ১৫ তারিখ যেহেতু আইয়ামে বিজের অন্তর্ভূক্ত, তাই দিনে রোজাও রাখা যেতে পারে। রাসুল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম আইয়ামে বিজে তথা প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন। অন্যদিকে হাদিসের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ইবনে মাজা’য় হজরত আলি রা. থেকে বর্ণিত হাদিসেও দিনটিতে রাতে ইবাদত ও দিনে রোজা রাখার কথা এসেছে। হাদিসটি মুহাদ্দিসদের কাছে দূর্বল। তবে ফজিলতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিসের উপর আমল করা যায় বলে অনেক হাদিস বিশারদগণ মত দিয়েছেন।
উল্লেখ্য রাতের আমলসমূহ ব্যক্তিগত, সম্মিলিত নয়। নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে নিদৃষ্ট পদ্ধতি তথা প্রথম রাকাতে অমুক সুরা, এতবার পড়তে হবে। সর্বমোট এত রাকাত পড়তে হবে এসব কিছু বর্জন করতে হবে। কেননা এগুলো ভিত্তিহীন। আবার দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে যেন ফজরের নামাজ ছুটে না যায় সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে। হালুয়া-রুটি বিতরণ ও মাইকে সবিনা পড়ার যে প্রচলন রয়েছে তা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল বিষয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করার তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : এমফিল গবেষক, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়