//জাতিসংঘে যাওয়ার ঘোষণা পাকিস্তানের//
ডেস্ক রিপোর্ট : যুদ্ধাপরাধের বিচারে দ- কার্যকরের প্রক্রিয়া নিয়ে পাকিস্তানের অপতত্রতা থামছেই না। মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির পর দুই দফায় বিবৃতি, জাতীয় পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব পাস ও বাংলাদেশের পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে তলবের পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার পর এবার জাতিসংঘে অভিযোগ করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে পাকিস্তানের এ ধরনের পদক্ষেপকে ঔদ্ধত্য মনে করছে ঢাকা। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে কমনওয়েলথের একটি বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের সমর্থনে পাকিস্তানের বক্তব্যকেও অনধিকার চর্চা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। অবশ্য বাংলাদেশ কোনো ক্ষেত্রেই ছেড়ে কথা বলছে না পাকিস্তানকে। অন্যদিকে, তুরস্কের ঢাকার দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য না পাওয়ায় এ বিষয়ে এখনই কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অনিচ্ছুক ঢাকার পররাষ্ট্র দফতর।
পাকিস্তানের বার্তা সংস্থা ডিএনডি জানিয়েছে, পাকিস্তানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে গতকাল নিজামীর ফাঁসি কার্যকরে মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপন হয় এবং এই প্রস্তাবের ওপর অর্ধ ডজন সিনেট সদস্য কথা বলেন। সিনেটর সিরাজুল হকের সঙ্গে যৌথভাবে প্রস্তাব উত্থাপন করা নেহাল হাশমি বলেন, নিজামী পাকিস্তানের জন্য যুদ্ধ করেছেন। এমন একজন যোদ্ধার জন্য পাকিস্তানকে শ্রদ্ধা জানাতেই হবে। তারা রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তুরস্ককে ধন্যবাদ জানিয়ে পাকিস্তানকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। এর জবাব দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা শারতাজ আজিজ। সিনেটকে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর প্রবীণ নেতাদের ফাঁসি দেওয়ার ইস্যুটি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ও অন্যান্য দেশের কাছে উত্থাপন করতে যাচ্ছে পাকিস্তান। শারতাজ আজিজ বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্ব বিশেষত মুসলিম সমাজের চাপের মুখে পড়লে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তার নীতি পরিবর্তনে বাধ্য হবে।
ফাঁসি দেওয়াকে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি লক্সঘনের ভুল দাবি আবারও করে উপদেষ্টা বলেন, পাকিস্তান ইতিমধ্যেই এই ইস্যুতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবের অনুলিপি বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ডেকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফাঁসির ঘটনাগুলোর প্রতি মনোযোগ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অবশ্য মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পরে লিডার অব দ্য হাউস রাজা জাফরুল হক বলেন, এখন বাংলাদেশে এসব ঠেকাতে মুসলিম দেশগুলোর যৌথ পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। এর আগে এই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সিনেট সদস্য মুশাহিদুল্লাহ দাবি করেন, ‘বাংলাদেশের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ পাকিস্তানকে ভালোবাসে। আর বাংলাদেশে ৭০-৮০ বছর বয়স্ক পাকিস্তানপন্থি নেতাদের বেছে বেছে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে’। ঢাকায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াকে ‘খুবই বিরক্তিকর’ আখ্যা দিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের দোসর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে কোনো বন্ধু রাষ্ট্র বিরোধিতা করতে পারে না। যেহেতু পাকিস্তান অব্যাহতভাবে বিরোধিতা করছে সেহেতু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়টি নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কোনো রাষ্ট্র যে বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না, বাংলাদেশের মৌলিক বিষয়ে বিরোধিতাকারীদের সমর্থনকারীরা বাংলাদেশের বন্ধু নয়। পাকিস্তান যে শুধু ফাঁসির সময় নিন্দা করেছে তা নয়, কমনওয়েলথের একটি বৈঠকেও
তারা বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে বক্তব্য দিয়েছে এবং সেটা আরও বেশি মাথা ব্যথার কারণ বাংলাদেশের জন্য। ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা সব বিষয়কেই বিবেচনায় রাখব। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালে যে সমঝোতা হয়েছিল তাতে পাকিস্তান স্পষ্টভাবে বলেছিল ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সেনাকে তারা জিম্মায় নিচ্ছে। জিম্মায় নেওয়া মানে দেশে নিয়ে বিচার করা, ছেড়ে দেওয়া নয়। কিন্তু পাকিস্তান কথা রাখেনি।
এ ব্যাপারে জবাব আদায়ের সময় এসেছে। হ্যাঁ এতদিন চুপ থাকা হয়েছে। এখন আর নয়। তুরস্কের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, আমাদের কাছে এ রকম কোনো তথ্য নেই যে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ ছাড়ার আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানিয়ে গেছেন যে, তিনি বাংলাদেশের বাইরে যাচ্ছেন এবং তার অবর্তমানে কে দায়িত্ব পালন করবেন, সেই কূটনীতিকের নামটাও বলে গেছেন। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু প্রত্যাহার হলে বা প্রত্যাহার করে নিলে সাধারণত বলে করা হয়। তা তারা করেনি। তিনি বলেন, পাকিস্তান ও তুরস্কের প্রতিক্রিয়াকে একপাল্লায় মাপার সুযোগ নেই। কারণ তুরস্ক বাংলাদেশের একটি বন্ধুপ্রতিম দেশ। আমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন