সালমা পারভীন : বিশ্বের অনেক শক্তিশালী দেশই ক্রমবর্ধমান শরণার্থী ও অভিবাসীদের চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে। অথচ উগান্ডা আভির্ভুত হয়েছে রীতিমত এই সমস্যার সমাধান নিয়ে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও শরণার্থী বিষয়ক নীতির দেশটির প্রশংসা করছে।
উগান্ডার রাজধানী কামপালার পশ্চিম দিকে গাড়ি চালিয়ে প্রায় ছয় ঘন্টার পথ পাড়ি দিলেই চোখে পড়বে ভিন্ন দৃশ্য। চারদিকে কমবেশি নানা উচ্চতার পাহাড় আর নদী ও লেকগুলো তীরে সবজির সমাহার। জায়গাটার নাম নাকিভেল। এটাকে কর্তৃপক্ষ বেছে নিয়েছে শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য। এক লাখেরও বেশি মানুষ এখন সেখানে বসবাস করছে।
খাদিজা আল হাসান আর তার সন্তানরা কাজ করছিলেন তাদের ছোট বাগানে। খাদিজা সন্তানদের শেখাচ্ছিলেন কিভাবে চারা গাছ রোপণ করতে হয় এবং পানিতে কিভাবে সবজির আবাদ করতে হয়। উর্বর মাটি হওয়ার কারণে এখানে সব কিছুই খুব সহজে বেড়ে ওঠে। সোমালিয়া থেকে পালিয়ে এসেছিলেন তারা। পরে কেনিয়া পার হয়ে উগান্ডা এসে পৌঁছান।
উগান্ডায় কোন সমস্যা নেই। শরণার্থীদের বাড়ি খাদ্য দেয়া হচ্ছে আর সন্তানরা পাচ্ছে বিনামূল্যে শিক্ষা। ঘরের দরজা খুলেই আপনি ঘুমাতে পারেন কেউ আপনাকে বিরক্ত করবে না।
শুধু খাদিজা এবং তার পরিবারই নয়। এখানে আসা বেশির ভাগ শরণার্থীই উগান্ডার নাগরিকদের মতই নানা সুবিধা পাচ্ছে সাথে বোনাস হিসেবে রয়েছে এক খন্ড জমি।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে ঐ অঞ্চলের দেশগুলো তো বটেই সারা বিশ্বের জন্যেই এটি একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত।
উগান্ডার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কর্মকর্তা চারলি ইয়ার্স বলছিলেন, শরণার্থীদের স্বাধীনভাবে থাকতে দেয়ার ক্ষেত্রে উগান্ডা একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। কেনিয়াতে দাবাং কাকুয়া ক্যাম্পে শরণার্থীদের চলাচল অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। এসব ক্যাম্পে কেউ কাজেরও অনুমতি পায় না। উগান্ডায় তেমনটি নয়। এখানে শরণার্থীদেরও সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আবার তারা স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। এটি সমাজ কাঠামোর উন্নতিতে ভূমিকাও রাখছে।
কিন্তু কেন উগান্ডা শরণার্থীদের এখন স্বাগত জানাচ্ছে। সেখানকার অনেকেই আসলে জানেন যুদ্ধের কারণে পালানোর মানে কি হতে পারে। দেশটির নিজের অভ্যন্তরীন সংঘাতের ইতিহাস রয়েছে। এমনকি প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রী সভার কয়েকজন সদস্যও নির্বাসনে ছিলেন অনেকদিন। তাদের শরণার্থী নীতিতে মূলত এসব অভিজ্ঞতারই প্রতিফলন। কিছু মানুষের মধ্যে অবশ্য এ নিয়ে ক্ষোভও রয়েছে। নাকিভেল সেটেলমেন্টের শুরুতে অনেকে শরণার্থীদের কারণে নিজেদের জমি হারানোর ভয় পেয়েছিলেন। সেখানকার কৃষক স্টিফেন কাফুনগো তাদেরই একজন।
স্টিফেন কাফুনগো বলেন, আমি এখানে ৩০ বছর ধরে বাস করছি এবং আমার জমির পরিমান ছিল ১শ ৪৩ একর। এখন তার অর্ধেকটা আছে। বাকিটা শরণার্থীরা নিয়ে নিয়েছে। ভবিষ্যতে আমার কি হবে জানি না। আমি মরে গেলে হয়তো আমার সন্তানদের ভুগতে হবে।
বিশ্বের যে সব দেশে জনসংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়ছে তার একটি উগান্ডা। জমি ও খাদ্যের দাম তাই বাড়ছে প্রতিনিয়তই। এটি একটি বড় প্রশ্ন যে শরণার্থীদের জন্য তাদের এমন স্বহৃদয় মনোভাব অব্যাহত থাকবে কিনা। তবে প্রশ্ন যাই হোক এই মূহুর্তে দেশটির জনগণ ও সরকার তাদের সর্বোচ্চটুকু করতে চেষ্টা করছে।
বিবিসি বাংলা থেকে নেয়া