মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : পাহাড়ি টিলার পরতে পরতে গাছে গাছে দোল খাচ্ছে আদা, কাটা আর জাড়া লেবু। চাষিরা জানালেন, গাছে গাছে সোনালি জাড়া লেবুর দোলনি থাকে সারা বছর। চাষিদের দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে পরিচিত এই লেবু ফসলই ওখানকার পাহাড়ি টিলার বারোমাসি ফসল। আর অন্যান্য মওসুমি ফল ও কৃষি ক্ষেতের অফ সিজনে তাদের অভাব অনটনের সময়ে আর্থিক সংকট কাঠিয়ে ওঠার অন্যতম সহায়ক এই বারমাসি লেবু। স্থানীয়রা জানালেন এক সময় অনাবাদি যে টিলাগুলো ছিল বনজঙ্গলে ভরপুর এখন সে খানে চাষ হচ্ছে নানাজাতের লেবু। চাষিরা এমন ফসল চাষে এখন বেশ সফলতা পাচ্ছেন। দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে চাষ। নতুম উদ্যমে আবাদ হচ্ছে অনাবাদি পাহাড়ি টিলা। ওই এলাকায় এখন অনেকেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপক পরিসরেও চাষ করছেন লেবু চাষ হচ্ছে বাড়িতে বাড়িতে। চাষিরা সবুজ এই ফসলের নাম দিয়েছেন পাহাড়ি সোনালি ফসল। কারণ, বছরজুড়ে এই ফসলগুলো তাদের মুখে হাঁসি ফোটায়। অল্প জায়গায় কম পরিশ্রমে লাভজনক এই লেবু চাষে ভাগ্যবদল হচ্ছে হাজারও মানুষের। এ ফসলই তাদের ভাগ্যবদলের প্রেরণা। মৌলভীবাজারের পাহাড়ি টিলাগুলোতে নানা জাতের মওসুমি ফলের চাষ হলেও একই সঙ্গে আদা, কাটা আর জাড়া লেবুসহ নানা লেবু জাতীয় ফসল চাষ হচ্ছে। তবে অন্যান্য ফসল মওসুম শেষ হলেই কমে যায় চাষিদের কর্মব্যস্ততা আর দেখা দেয় আর্থিক সংকট। কিন্তু এই সময়টাতে এই লেবু পরিচর্যা আর বিক্রি তাদের কর্মচঞ্চল রাখে আর দূর করে আর্থিক সংকট। বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে লেবুচাষ বেশি। কাগজী লেবুচাষের জন্য শ্রীমঙ্গল প্রসিদ্ধ হলেও আদা, কাটা, জাড়া, পাতু, আশকুল, মাতু (জাম্বুরা), শাশনী, সাতকরা ও কমলা লেবুচাষের জন্য জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা সবার ওপরে। চাষিদের দেয়া তথ্যমতে লেবুচাষের এলাকা হচ্ছে পূর্ব শাহবাজপুর, উত্তর শাহবাজপুর, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামই। তারা জানান, দক্ষিণ শাহবাজপুর এলাকার সাতরাকান্দি, উত্তর ডিমাই, দক্ষিণ ডিমাই, জালাই, কেচির গুল, হাতি ডিমাই, উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বোবারতল, ষাটঘর, করইছড়া, মাজঘান্দাই, পশ্চিম ঘান্ধাই, ইসলামনগর, পেকুছড়া, এছাড়া পাল্লারতল, কাঁঠালতলী ও দক্ষিণভাগসহ মাধবকুণ্ড এলাকার বিভিন্ন গ্রামেই চাষ হচ্ছে। জুড়ী উপজেলার লাঠি টিলা, লালছড়া, জরি ছড়া, লাঠিছড়া, শুকনাছড়া ও কচুরগুল এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে লেবু জাতীয় এ ফসল। সরজমিনে ওই এলাকায় গেলে লেবুচাষি গোবিন্দপুর গ্রামের আতিক মিয়া, শিপন আহমদ, বোবারতল এলাকার মো. ফখর উদ্দিন, বাছিত মিয়া, বিলাল মিয়া, লিয়াকত হোসেন, নাসির মিয়া ও আব্দুর রহমানসহ অনেকেই জানান চৈত্র্য মাসের শেষ দিকে লেবুগাছগুলোতে ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ ভাগ থেকে ফল বিক্রি শুরু করেন তারা। চলে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত। এর মধ্যেই যে গাছগুলোর ফল শেষ হয়ে যায় সে গাছগুলোতে আবার ফুল ও ফল আসে। এভাবেই বছরজুড়ে গাছে লেবু থাকে কম-বেশি। একটা লেবুগাছ ফলন দেয় ৭-৮ বছর। একটি পরিপক্ষ সুস্থ সবল গাছে (আদা ও কাটা লেবু) ৬০০ থেকে ৮০০ লেবু ধরে। লেবুচাষিরা জানালেন এখন প্রতি হালি জাড়া লেবু বিক্রি হচ্ছে বড় ও মাজারি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। আদা লেবু মাঝারি ও বড় প্রতি হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কাটা লেবু ১৫ থেকে ২০ টাকা প্রতি হালি লেবু পাইকারি দরে তা বিক্রি হচ্ছে।