ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীতে বাসের বেপরোয়া চলাচলে রাস্তায় যানজট ও যাত্রী ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। বাসচালকদের প্রতিযোগিতা, এলোপাতাড়ি বাস রেখে যাত্রী উঠানোসহ আগে যাওয়ার রেসে নিত্যদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। মূল্যবান প্রাণ ঝরে যাচ্ছে রাজধানীর রাজপথে। মূল্যবান কর্মঘণ্টা রাস্তায় খুইয়ে উদ্যমহীন ক্লান্তি নিয়ে বাসায় ফিরছেন লাখো মানুষ। কর্মদিবসে রাস্তায় বেরুলেই দুর্ভোগে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টা। রাজধানীর প্রগতি সরণির নতুন বাজার এলাকায় স্থবির হয়ে আছে সব যানবাহন। সামনের দিকে এগোনোর কোনো উপায় নেই। ক্ষুব্ধ, বিরক্ত যাত্রীরা ট্রাফিক পুলিশকে গালাগাল করছেন। পুলিশ রাস্তা আটকে সিটি সার্ভিসের বাসগুলোকে ‘ইউটার্ন’ নিয়ে গুলশানের দিকে যেতে পথ করে দিচ্ছে।
অন্যদিকে নতুন বাজার মোড়ের পশ্চিম প্রান্তে দীর্ঘ লাইনে বাস দাঁড়িয়ে থাকে দিনের বিভিন্ন সময়। এসব বাসের কারণেও পুরো এলাকায় দিনভর যানজট লেগে থাকে। নতুন বাজার থেকে গুলশান-বনানী হয়ে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, গাবতলী চলাচলকারী বাসগুলো যাত্রী নিতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তার ওপর। এ জন্য যানজট ক্রমশই দুঃসহ হয়ে উঠেছে এই এলাকার। সকাল ৮টা। নর্দ্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে শাহজাদপুর পর্যন্ত সড়কের পূর্ব প্রান্ত যানবাহনে ঠাসা। গাড়ির ভিতর যাত্রীরা ঘেমে নেয়ে একাকার। এই এলাকাটি পেরুতেই একেকটি গাড়ির দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়। মতিঝিলগামী ব্যাংকার আহমেদ হোসেন বললেন, এ পরিস্থিতি ঠেলে প্রতিদিন অফিস যেতে হয়। দুপুর ১২টা। মহাখালী থেকে তেজগাঁও তিব্বত পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারে ওঠার আগে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় যাত্রীবাহী বাসগুলো অলি-গলিতে ঢুকে পড়ে।
সায়েদাবাদ-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী বলাকা পরিবহনের এক চালক বললেন, ট্রাফিক পুলিশ কাগজপত্র আটকাইয়া টাকার জন্য প্রায়ই হয়রানি করে। এ জন্য আমরা সহজে পুলিশের সামনে পড়তে চাই না। এক জায়গায় টাকা দিলে সারা দিন সেই টাকা উসুলের জন্য বেপরোয়া গাড়ি চালাই। প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন রুটের বাসের যাত্রীরা জানান, নগরীতে যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে শত শত যানবাহন। রাস্তার একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ, ঢাকা মহানগর পুলিশ দায়িত্ব পালন করে।
সেখানে পুলিশের সামনে দিয়ে বাসগুলো ট্রাফিক আইন না মেনে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়, ব্যস্ত সড়কে রাস্তা ফাঁকা পেলে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, চালকের জায়গায় হেলপার গাড়ি চালায় এবং যখন-তখন মোবাইলে কথা বলে এবং গাড়ি চালায়; যা নগরীর বাস দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। পুলিশ ও বাসের চালকরাও স্বীকার করে বলেন, কার্যত পাঁচটি কারণ বাস দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এর মধ্যে মাদকাসক্ত হয়ে গাড়ি চালানো, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই হেলপার থেকে ড্রাইভার হয়ে যাওয়া, নিয়ন্ত্রণহীন গতিতে বাস চালানো, ট্রাফিক সিগন্যাল ও ড্রাইভিং নিয়ম না মানা এবং ত্রুটিযুক্ত গাড়ি দিনের পর দিন সড়কে চালানো।
রাজধানীর কয়েকটি ব্যস্ত সড়ক ও বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা চলছে। গাড়ি না থামিয়ে মাঝ রাস্তায় চলন্ত গাড়িতে যাত্রী উঠানো হচ্ছে। এতে যে কোনো মুহূর্তে আরও মানুষের প্রাণ ঝরে যেতে পারে। রাস্তার এসব দুর্ঘটনার জন্য পুলিশেরও দায়িত্বহীনতা রয়েছে। অনেক স্থানে পুলিশের বাড়াবাড়ির কারণে নির্ধারিত স্টপেজের বাইরে গিয়ে চালকরা যাত্রী ওঠানামা করাতে বাধ্য হচ্ছেন। নগরীর যেসব জায়গা দুর্ঘটনাপ্রবণ সেখানে গাড়ির জটলা গতকালও ছিল চোখে পড়ার মতো।
ফার্মগেট, শাহবাগ, কাওরানবাজার, মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট মোড়, পল্টন, মতিঝিল, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, গাবতলী, মহাখালী, বনানী, কাকলী মোড়, বিমানবন্দর মোড় প্রভৃ
তি স্থানে যানজট ছিল প্রকট। ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো গতকালও চলাচল করেছে ইচ্ছেমতো। পুলিশ এসব দেখেও প্রতিকারে এগিয়ে না যাওয়ায় পথচারীরা বাসচালক ও বিভিন্ন স্টপেজে দায়িত্বরত ট্রাফিক ও সার্জেন্টদের উদ্দেশ করে নানান মন্তব্য করতে শোনা গেছে।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গণপরিবহনে নৈরাজ্য এখনো অব্যাহত রয়েছে। যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে। কোনো নিয়মকানুন মানছেন না চালক-হেলপাররা। যাত্রী তুলতে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা চলছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন থেকে পরিবহন ব্যবস্থাকে মুক্ত না করা পর্যন্ত আমরা গণপরিবহন থেকে কোনো সুবিধাই পাব না। বাংলাদেশ প্রতিদিন