//রাজনীতি বাংলাদেশে মাথাব্যথা লন্ডনে//
তারেক : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে আসছেন পারিবারিক সফরে। কিন্তু সেই সফরকে বাধাগ্রস্ত করতে যুক্তরাজ্য বিএনপির ঘুম নেই! অন্যদিকে সফরটি ব্যক্তিগত হলেও সফল করার প্রাণান্ত চেষ্টা যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের। এভাবেই রাজনীতিতে সক্রিয় প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বাংলাদেশে শফিক রেহমান গ্রেফতার হলেন। এর প্রতিবাদে গ্রেট ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে যুক্তরাজ্য বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো অন্তত ৫০টি প্রতিবাদ সভা করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি উপলক্ষে ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে গ্রগতিশীলদের মিষ্টি খাওয়ার ধুম পড়লেও অপর একটি পক্ষ আবার গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে। বাংলাদেশের প্রতিটি ইস্যুর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিরা যুক্ত থাকতে চান। পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিতে চান। সেই পাকিস্তান আমল থেকে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বঙ্গবন্ধুর সাত দফা আন্দোলনের অনেক আগেই ব্রিটেন থেকে উচ্চারিত হয়েছিল— এক দফা এক দাবি, বাংলাদেশের মুক্তি। বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তির জন্য প্রবাসীরাই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক মতামত আদায়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন বাংলাদেশিরা। মুক্তিযুদ্ধের পর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রিজার্ভের সাড়ে চার কোটি টাকার মধ্যে চার কোটি টাকাই ছিল যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের সহায়তায়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের রাজনীতির প্রতিটি উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়ে থেকেছেন প্রবাসীরা।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতির মতোই বিতর্কিত ও কলুষিত এখানকার বাংলাদেশিদের রাজনীতি। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের প্রধান সব রাজনৈতিক দলেরই কার্যক্রম রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, ইসলামী সংগঠনগুলোর সরাসরি কমিটি রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর সবচেয়ে বড় আস্তানা যুক্তরাজ্য হলেও এখানে কৌশলগত কারণে নেই কোনো কমিটি। মারামারি, ধাক্কাধাক্কি ইত্যাদির কারণে নতুন প্রজন্মের কাছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই রাজনীতি অপছন্দের তালিকায়।
সেই সঙ্গে ব্রিটিশ মূলধারার মিডিয়া, সরকার, রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দল সব জায়গায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থানের কারণে দেশের ক্ষতিই হচ্ছে বেশি— এমনটাই মনে করেন সাংবাদিক ও গবেষক ফারুক আহমেদ। ২০০ বছরের প্রবাসী বাংলাদেশিদের রাজনীতি নিয়ে গবেষণাধর্মী বই লিখেছেন তিনি— ‘বিলেতের রাজনীতি’। ফারুক আহমেদ বলেন, ‘রাজনীতি বাংলাদেশিদের রক্তে মিশে আছে। আমরা অন্তরে ধারণ করি ব্রিটেন আর মুখে বাংলাদেশ। এই দ্বিচারিতা আমাদের মধ্যে। আমরা ব্রিটেনের সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কথা বলি বাংলাদেশের জন্য। এটা কোনোভাবে সুফলতা বয়ে আনবে না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের তিনজন মেয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। সেখানে উচিত ছিল ১৫ জন থাকা। তাহলে বাংলাদেশের যে কোনো বিষয় নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বড় ধরনের ভয়েস থাকত। ব্রিটিশ ভিসা সেন্টার কীভাবে ভারতে যায় সেটি বোঝা যেত তখন।’ বাংলাদেশ প্রতিদিন