সীমান্ত : মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে বিএনপিতে কোন্দল বেড়েই চলেছে। এ নিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটিও বেশ সরব। এই ইস্যুতে কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলের নেতারা। চলছে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দু’পক্ষের নেতাদের মধ্যে চলছে ঠা-া লড়াই।
একটি অংশ মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠনের দাবি জানালেও বিষয়টি ততটা আমলে নেননি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে অভিযোগের বিষয়ে এবং অভিযোগকারীদের বিষয়ে খোঁজ নিতে আস্থাভাজন কয়েক নেতাকে তিনি এরই মধ্যে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া যারা কাঁদা ছোড়াছুড়িতে ইন্ধন দিচ্ছেন তাদের একটি তালিকাও চেয়ারপারসনের কাছে দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে যাদের বিরুদ্ধে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় কমিটিতে যারা পদবঞ্চিত হয়েছেন বা যাদের সমর্থকরা গুরুত্বপূর্ণ পদ পাননি, এমন কয়েকজন নেতা বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে আমাদের হেয় করতে চাচ্ছেন। কমিটির ব্যাপারে সিনিয়র নেতাদের মতামত না নেয়ায়ও কেউ কেউ ক্ষুব্ধ। জানা গেছে, মনোনয়ন বাণিজ্যের বিষয়টি প্রথমে উত্থাপন করা হলেও তা তেমন গুরুত্ব পায়নি। এরপর তাইফুল ইসলাম টিপু নামের এক নেতার ব্যাংক হিসাব প্রকাশ পায়। এতে দেখা যায়, গত বছরে টিপুর ব্যাংক হিসাবে ৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। দলের একটি অংশের অভিযোগ, এটা মনোনয়ন বাণিজ্যের টাকা।
এ বিষয়ে তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, তাকে হেয় করতেই এসব নোংরামি করা হচ্ছে। টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ব্যবসা করছেন। এটা তার ব্যবসায়িক টাকা। ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রকাশ করার সঙ্গে দলের কিছু নেতা জড়িত বলে অভিযোগ করে টিপু বলেন, ব্যাংকে কারও ব্যক্তিগত তথ্য বের করা সাধারণ কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তারা এক বছরের হিসাব কেন প্রকাশ করেছে। তার আগের বছরও প্রায় একই পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে। তাহলে কয়েক বছর আগ থেকেই কি মনোনয়ন বাণিজ্য শুরু হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে দলটির একজন নীতিনির্ধারক জানান, কোনো নেতা উৎকোচের বিনিময়ে কাউকে মনোনয়ন দেয়ার আশ্বাস দিলেই তিনি মনোনয়ন পেয়ে যান না। দলের মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হাত দিয়েই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়। তবে যদি সত্যি মনোনয়ন বাণিজ্য হয়ে থাকে তাহলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও দায় এড়াতে পারেন না।
জানা গেছে, ৯ মের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বেশিরভাগ সদস্যই মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু বিষয়টি খালেদা জিয়া তেমন আমলে না নেয়ায় তারা বেশ ক্ষুব্ধ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাদারীপুরের শিবচরে ষষ্ঠ ধাপের তিনটি ইউপিতে উপজেলা সভাপতি নাজমুল হুদা চৌধুরী মিঠুর সমর্থকদের প্রথমে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়। কিন্তু প্রত্যয়নে কিছুটা ভুল হওয়ায় তা সংশোধন করতে এসে বিপাকে পড়েন মিঠু। জানতে পারেন, ওই তিন ইউপিতে অন্য এক নেতার সমর্থকদের মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় বিএনপি নেতা জামান কামাল নুরুদ্দিন মোল্লা কেন্দ্রের কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করে তার সমর্থকদের জন্য মনোনয়ন বাগিয়ে নেন। মিঠু চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেও কোনো সন্তোষজনক জবাব পাননি।
অভিযোগ রয়েছে, নুরুদ্দিন মোল্লা গুলশান কার্যালয় থেকে শুরু করে দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েক নেতাকে নিয়মিত মাসোহারা দেন। বিনিময়ে তারা দলের চেয়ারপারসনকে ভুল বুঝিয়ে তার সমর্থকদের মনোনয়ন পাইয়ে দেন। এজন্য নবগঠিত কমিটির একজন মহিলা সাংগঠনিক সম্পাদকও চেয়ারপারসনের কাছে তদবির করেন।
ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচনে সাভার উপজেলার বনগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. সাইফউদ্দিনকে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দে
য়ার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিনসহ তৃণমূল নেতারা সুপারিশ করেন। কিন্তু তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় এক নেতার পছন্দের প্রার্থী সোহেলকে মনোনয়ন দেয়া হয়।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে যেহেতু গণমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছে এবং নেতাকর্মীরাও অনেকে অভিযোগ করছেন, তাই ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে চেয়ারপারসনের কাছে অনুরোধ জানানো হয়। দলের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা করে অবশ্যই চেয়ারপারসন অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখবেন বলে আশা করি। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি করেই এসব খতিয়ে দেখতে হবে এমনটা নয়। যে কোনোভাবেই চেয়ারপারসন তা জানতে পারেন।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আসম হান্নান শাহ বলেন, মনোনয়ন ও পদ বাণিজ্যের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নিয়ে দলের মধ্যে যা হচ্ছে সেটা খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়টি আমলে নেয়া উচিত। যদি এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। পাশাপাশি কাউকে ঘায়েল করার জন্য কেউ যদি এসব গুজব ছড়ান তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে ব্যক্তিস্বার্থে কোনো নেতা কাদা ছোড়াছুড়ি করার সাহস না পান। যুগান্তর