নাসিমুজ্জামান সুমন : ভিক্ষা পেশায় যত বেশি বাচ্চা তত বেশি লাভ। একটা বাচ্চা থাকলে যে পরিমান ভিক্ষা পাওয়া সম্ভব, দুইটি বাচ্চা থাকলে সেই ভিক্ষার পরিমানটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। যদিও দুইটি বাচ্চা সামলানো বেশ কষ্টের কাজ। কিন্তু যারা ভিক্ষা করেন তাদের কাছে এটা কোনো ব্যাপারই না। কারণ, হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় ঘুমের ওষুধ।
মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্ত্বর এলাকায় এক নারীকে দুইটি শিশু নিয়ে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। দুইটি শিশুর মধ্যে একজন ঘুমন্ত আর অন্যজন জেগে আছে। ঘুমন্ত শিশুটি গরমের মধ্যে দুপুর থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত একটানা ঘুমিয়ে আছে। কী করে সম্ভব? তবে কি শিশুটিকে তার মা ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলেন?
স্বীকার করুক আর না-ই করুক অসহ্য গরম এবং যানবাহনের প্রচন্ড শব্দের ভেতরে ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকাটা একটু অস্বভাবিক বলেই মনে হওয়া স্বাভাবিক। একইসাথে একই বয়সের দুইটি বাচ্চা দেখেও সন্দেহের পরিমান আরও একটু বাড়িয়ে দেয়। শিশু দুইটির মায়ের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি নিজেকে তাদের মা বলে পরিচয় দেন।
কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ৩৬০ ডিগ্রি’র টিম তার ঠেলা গাড়ি অনুসরণ করে। গাড়ি ঠেলতে ঠেলতে তিনি চলে যান মিরপুরের দিয়াবাড়ি সংলগ্ন বেড়ি বাঁধ এলাকায়। অতঃপর নিশ্চিত হওয়া যায় তার ঠেলাগাড়িটি ছিল ভাড়া করা। গাড়ির মালিকের সাথে কথা হলে জানা যায়, তিনি ১৫টি ঠেলা গাড়ির মালিক এবং প্রতিটি গাড়ি ভাড়া দেয়া হয় ৩০ টাকার বিনিময়ে। আরও জানা যায়, শুধু গাড়ি নয়, ভিক্ষার জন্য শাড়িও ভাড়া দেয়া হয়। এমন কী ভিক্ষার জন্য বাচ্চাও ভাড়া দেওয়া হয় বলে তথ্য আছে যা কেবল প্রমাণের অপেক্ষায়।
মিরপুরের ১০ নম্বর পদচারী সেতু। এই পথে ভিক্ষুক একবার যাকে ধরেণ তিনি ভিক্ষা দিতে বাধ্য। পথচারী টাকা না দেয়া পর্যন্ত শিশু পা ছাড়ে না। ভিক্ষা বৃত্তির এমন কৌশল ৩৬০ ডিগ্রি টিমের ক্যামেরায় ধারণ করার সময় টের পেয়ে যায় তারা। কয়েকজন দৌড়ে পালিয়ে যায়। ভুলবশত পালাতে না পারা কন্যা শিশুটির নাম লামিয়া। তার কাছে বাবা-মা’র কথা জানতে চাওয়া হয়। তার কথা শুনে মনে হয়, কেউ একজন তার মা সেঁজে তাকে ভিক্ষের পথে ঠেলে দিয়েছে। তাকে নিয়ে তার মায়ের কাছে যেতে চাওয়া হলেও লামিয়া কিছুতে যেতে রাজি হয় না। কারণ লামিয়ার অভিযোগ, প্রতিদিন ৩শ’ টাকা থেকে ৪শ’ টাকা না দিলে তাকে নির্যাতন করা হয়। মানুষকে জমায়েত হতে দেখে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় কাফরুল থানার পুলিশ। পুলিশের সহায়তায় লামিয়াকে নিয়ে টিম ৩৬০ ডিগ্রি রওনা হয় লামিয়ার বাসার উদ্দেশ্যে।
লামিয়ার বাসায় গিয়ে দেখা হয় তার মা রিনা আক্তারের সাথে। লামিয়া তার মেয়ে কি-না এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তার ৪ সন্তানের মধ্যে লামিয়া ছোট মেয়ে। টাকা না দিতে পারলে লামিয়াকে নির্যাতনের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন লামিয়ার মা রিনা আক্তার। অথচ, তার মায়ের সামনেও সেই কঠিন সত্য উচ্চারণ থেকে বিরত হয়না লামিয়া। লামিয়া আসলে কার মেয়ে? প্রমাণের জন্য রিনা আক্তারের কাছে লামিয়ার ছোট বেলার ছবি দেখতে চাওয়া হয়। ছবি গুলো দেখে এই প্রমাণিত হয়, লামিয়া তার মেয়ে। তাহলে কী রিনা আক্তার শুধুমাত্র টাকার লোভে ভিক্ষার কাজে নামিয়েছেন লামিয়াকে?
উচ্চ আদালতে নির্দেশ এবং ডিএমপির অধ্যাদেশে বলা আছে, ‘শিশু ভিক্ষাবৃত্তিসহ সব ধরনের ভিক্ষা বৃত্তি অবৈধ এবং বে-আইনী।’ এছাড়া জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে, ‘প্রত্যেকটি শিশুর নিরাপত্তা এবং বেঁচে থাকা তার জন্মগত অধিকার।’
যতটুকু অর্থের প্রয়োজন তার থেকে বেশি অর্থ যখন একটি শিশুর কাছে চলে আসে তখন তাদের মাথায় খেলা করে অন্যকিছু হতে পারে ও অবৈধ চিন্তা। যার ফলে তারা আসক্ত হচ্ছে ড্যান্ডিতে এবং এরপর আসক্তি জমাবে আরও বড় কোন নেশায়। তাদের বাবা-মা’র শাসন থাকেনা, থাকেনা ভালো-মন্দ চিনিয়ে দেয়ার কেউ। তাই তাদে
র অনিবার্য গন্তব্য হয় অন্ধকার গলি। কিন্তু যিনি দুধের শিশুকে ভিক্ষার কাজে নামায় তাকে কী বলা যায়?
সুত্র : যমুনা টিভি