ওমর শাহ : মসজিদ আল্লাহর ঘর। পবিত্র ঘর। ইবাদতের ঘর। এ ঘরে কী ঘুমানো যাবে? অনেক সময় মুসল্লিদের মসজিদে ঘুমাতে দেখা যায়। তাবলীগ জামায়াতের মুসল্লীরাও মসজিদে ঘুমিয়ে থাকেন। বিষয়টি শরিয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু জায়েয? এমন প্রশ্ন অনেকেরই। নিম্মে কুরআন হাদিস ও বিশেষজ্ঞ মুফতিদের দৃষ্টিতে মসজিদে ঘুমানোর বিষয়টি তুলে ধরা হলো।
ইমাম বুখারী (রহ.) সহিহ বুখারিতে হযরত আয়শা রা. এর একটি হাদিস বর্ণনা করেন। ঘটনাটি একটি বাঁদির। হযরত আয়শা রা. বলেন, মহিলাটি ইসলাম গ্রহণ করলে তাঁর থাকার জন্য মসজিদে একটি তাবু খাটানো হল। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনে বত্তাল রহ. বলেছেন, এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, রাত যাপনের স্থান নেই এমন যে কোন নারী-পুরুষের জন্য মসজিদে থাকা জায়েয।) [উমদাতুল কারী, বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ]
অপর এক হাদিসে সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. নিজের সম্পর্কে বলেন, তিনি ছিলেন অবিবাহিত যুবক। স্ত্রী-পুত্র কেউ ছিল না। তখন তিনি মসজিদে নববীতেই (রাতে ও দিনে) ঘুমাতেন। [সহীহ বুখারী]
জামে তিরমিযী (তিরমিযী শরীফ) ও ইবনে আবী শাইবার বর্ণনায় বক্তব্যটি তুলে ধরা হয়েছে এভাবে, ‘আমারা একদল যুবক রাতে ও দিনে মসজিদে শয়ন করতাম’।
হযরত সাহল ইবনে সা‘দ রা. বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সা. হযরত ফাতেমার ঘরে এসে আলীকে (রা.) পাননি। জিজ্ঞেস করলেন, আলী কোথায়? ফাতেমা বললেন, আমাদের দু’জনে মধ্যে কিছু রাগারাগি হয়েছে। ফলে তিনি রাগ করে এখানে বাইরে চলে গেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. একজনকে বললেন, তাকে একটু খুঁজে দেখ কোথায়। লোকটি এসে জানাল, আলী মসজিদে ঘুমিয়ে আছেন। রাসূলুল্লাহ সা. এসে দেখলেন আলী শুয়ে আছেন। শরীর এক পাশ থেকে চাদর পড়ে গেছে। আর গায়ে ধুলো-বালি লেগে রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সা. তাঁর গায়ের বালি ঝেঁড়ে দিচ্ছেন আর বলছেন ‘আবু তোরাব উঠ উঠ। (সহীহ বুখারী)।
এ সকল হাদিস দ্বারা বুঝে আসে মসজিদে ঘুমানো জায়েয রয়েছে। নবীজি সা., খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর, হযরত উসমান, হযরত আলী, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, হযরত আবু যর গিফারী (রা.) ও আহলে ছুফ্ফা সকলেই মসজিদে ঘুমিয়েছেন। তাবেয়ী-তবে তাবেয়ীনের অনেকেই মসজিদে ঘুমিয়েছেন এবং নির্দ্বিধায় মসজিদে ঘুমানোকে জায়েয বলেছেন।
ফলে প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ইমামগণ, আবু হানীফা, মালেক, শাফেয়ী ও আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. প্রয়োজনে মসজিদে ঘুমানোকে জায়েয বলেছেন। তবে ইমাম মালেক ও আহমদ (রহ.) বলেছেন, নিজের পৃথক ঘুমানোর জায়গা থাকা সত্ত্বেও মসজিদকে নিয়মিত ঘুমানোর জায়গা বানিয়ে নেয়া উচিত নয়। হাঁ ইবাদত ও নেক কাজের উদ্দেশ্যে সকল মাযহাবেই নির্দ্বিধায় মসজিদে ঘুমানো জায়েয।
[ দ্রষ্টব্য, ফাতহুল বারী, ইবনে রজব, ই‘লামুস্সাজিদ বি আহ্কামিল মাসাজিদ, মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ যারকাশী
[ (মৃত ৭৯৪ হি.) পৃ. ৩০৫-৩০৭]