এম কবির : দেশে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা খুনের শিকার হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। দেশ এগিয়ে নিতে স্থিতিশীল পরিবেশই চান তারা।
সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভিতও মজবুতের পক্ষে ব্যবসায়ীরা। কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়ন— এ নীতিতে বিশ্বাসী নয় কোনো কোনো রাজনৈতিক দল। ওই অংশের মতে, গণতন্ত্রের পাশাপাশি উন্নয়ন সমানতালে এগিয়ে চলবে। অন্যদিকে সরকারি দল বলছে, দেশে কার্যকর সংসদ আছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও আছে। গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ বিকাশের ক্ষেত্রে কমতি থাকলেও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি এখন অভ্যন্তরীণ সংকটে জর্জরিত। রাজপথেও তারা বিরোধী দলের ভূমিকায় তেমন শক্ত অবস্থানে নেই। মামলার পাহাড়ে বিপর্যস্ত দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী। রাজনীতিতে এখন চরম বেকায়দায় এ দলটি। আ.লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে এখন বিকল্প পথে ক্ষমতা দখলের পায়তারা করছে।
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও এখন সরকারের অতি তোষামোদিতে ব্যস্ত। নামেই তারা বিরোধী দল। বাম দলগুলোর বড় অংশই সরকারের সঙ্গে একাকার। বাইরে থাকা অন্য দলগুলোও নিষ্ক্রিয়। নানামুখী সংকটের পরও বর্তমান স্থিতিশীল অবস্থার ধারাবাহিকতা চায় সর্বস্তরের মানুষ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, ‘সরকার পরিবর্তন এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র। রাজনীতির গতিশীলতাই এই পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আর সেই পরিবর্তন হবে ভোটের মাধ্যমেই।’
সোমবার (১৬ মে) বিকেলে রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চার্জশিটের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে মওদুদ এসব কথা বলেন। মওদুদ বলেন, ‘অভিজ্ঞতা বলছে, সরকার বেশি বাড়াবাড়ি করছে। মামলা দিয়ে গুম-হত্যা করে রাজনীতিকে জর্জরিত করেছে অবৈধ সরকার। কঠিন সমাজে বসবাস করছি আমরা। কয়েকটি জিনিস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। সীমা ছাড়িয়ে গেলে জনগণ এমন বিদ্রোহ করে সরকার টেরই পায় না- কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল।’
বর্তমান সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে লন্ডনে সাফাদির সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক হয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ।
সোমবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গণসংবর্ধনা প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ দাবি করেন।
হানিফ বলেন, ‘খালেদা এখন আন্তক সন্ত্রাসীদের নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরুছেন। তার যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর মোসাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেছে। আর ফখরুহেব বললেন, ‘এটি ব্যক্তিগত ব্যাপার, তাতে দলের দায় নেই।’ ফখরুহেবের কাছে জানতে চাই, মোসাদের কাছে আসলাম চৌধুরীর কী এমন ব্যক্তিগত ব্যাপার থাকতে পারে? ইসরায়েলের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক ও ব্যবসায়িক কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের সঙ্গে গোটা মুসলিম জাহানের কোনো সম্পর্ক নেই, তারা মুসলিম জাহানের শত্রু। সেখানে আপনার নেতার মোসাদের সঙ্গে কী সম্পর্ক করেছে? আর আপনি বলবেন- আপনাদের দায় নেই, এমন বক্তব্য জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’
আ.লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ‘ফখরুহেব ভেবেছেন আসলামের উপর দোষ চাপিয়ে বেঁচে যাবেন, সেটি সম্ভব হবে না। ইতোমধ্যে মোসাদি ইসরায়েলের এক পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ব্রাদারহুড শাসন করছে। সেখানে অন্য ধর্মের লোকজন অত্যাচারিত হচ্ছে। সে কারণে সরকার পতন করতে তিনি বিএনপির শীর্ষ নেতা মিস্টার রহমানের সঙ্গে বৈঠক
করেছেন। মিস্টার রহমানটা কে?’
‘ফখরুল সাহেব, মিস্টার রহমানটা হচ্ছে তারেক রহমান। লন্ডনে তার সঙ্গে বৈঠক করে তারেক রহমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতে সাফাদির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে আসলামের।’- বলেন হানিফ।
হানিফ আরো বলেন, ‘ভেবেছেন অপরাধ করে পার পেয়ে যাবেন, সে সুযোগ নেই। এর আগে তারেক রহমান আবুধাবিতে সন্ত্রাসী দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তখনও ফখরুল সাহেব বলেছিলেন- এটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এসব বলে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।’
‘আইন-শৃংখলা বাহিনী আসলামকে ধরেছে। বিশ্বাস করি, তারা জেরা করে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের যে নেতারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করবে।’
গতকাল সোমবার সকালে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বাসায় ঢাকায় সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক মুখ্য উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম ই টডের সঙ্গে বিএনপির ৬ নেতা বৈঠক করেছেন। প্রায় দুই ঘণ্টার এই বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছে বিএনপি।
বিএনপির পক্ষ থেকে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে খুন, কেন্দ্র দখল, রাতে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি ও জাল ভোট প্রদানের তথ্য সংবলিত একটি পরিসংখ্যানপত্র দিয়ে বলা হয়, এই সরকার এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনোভাবেই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এ যাবৎ যতগুলো ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে সবগুলোতে ভোটের নামে তামাশা হয়েছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার অথবা জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন চায় বিএনপি। বিএনপির নেতারা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা এইসব তথ্য জানিয়েছেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, গণতন্ত্রের উত্তরণ, ব্লগার-ইমামসহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের খুনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কী- এ নিয়েও বিএনপি নেতাদের কাছে জানতে চান উইলিয়াম ই টড।