ডেস্ক রিপোর্ট : বুক ধড়ফড় করা কিছু মুহূর্তের পরই এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সাকলাইন সজীবের করা ৪৭তম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলটাকে বিশ্বনাথ হালদার ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে সীমানার বাইরে আছড়ে ফেলতেই ‘বিশ্বজয়ের’ উৎসবে মাতলেন কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমির খেলোয়াড়েরা।
বিশ্বজয়ই তো! প্রথম ছয় ম্যাচেই হেরে অবনমনের চোখরাঙানি দেখছিল যে দল, তারাই কিনা হারিয়ে দিল শিরোপা জিততে দল গড়া আবাহনীকে। আর ৩ উইকেটের এই হারে শীর্ষ ছয়ে থেকে সুপার লিগে ওঠাটাই কঠিন হয়ে গেল তামিম ইকবালের দলের। সাত ম্যাচের চারটিতেই হেরেছে আকাশি-হলুদরা।
কাল ফতুল্লায় আক্ষরিক অর্থেই আবাহনীকে শিক্ষা দিয়েছে কলাবাগান একাডেমি। আর তাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদুল হাসান। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাবেক অধিনায়ক কাল ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে অবিসংবাদিত ম্যাচসেরা।
শুরুতে বোলিংয়ে ১০ ওভারে ৫২ রান দিয়ে তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর মতো নামীদামি ব্যাটসম্যানদের উইকেট। এরপর উইকেটে বুক চিতিয়ে ১০৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। আর তাতেই জ্বলেপুড়ে ছারখার আবাহনী।
মাহমুদুলদের সামনে ছিল ২৮৩ রানের চ্যালেঞ্জ। অধিনায়ককে ব্যাট হাতে নামতে হলো অষ্টম ওভারেই, দুই ওপেনারের বিদায়ের পর। এর আগেই অবশ্য ৭.২ ওভারে রান উঠে গেছে ৪৮। রানরেটটা আর পড়তে দেননি মাহমুদুল। বাড়তে দেননি আস্কিং রেটটাও।
উইকেটে এসে যতীন সাক্সেনার সঙ্গে জুটি বাঁধা মাহমুদুল প্রথম চার মারলেন মুখোমুখি হওয়া সপ্তম বলে। বাঁহাতি স্পিনার অমিত কুমারের বলটা লং অন দিয়ে বেরিয়ে গেল সীমানার বাইরে। এরপর আরও ৭টি চার ও মিড উইকেট ও লং অফ দিয়ে ৩টি ছয়। মাহমুদুল অবশ্য ৭৭ রানের তৃতীয় উইকেট জুটিতে কিছুটা আড়ালেই ছিলেন সাক্সেনার। ৪১ বলে ৫ চার ও ১ ছয়ে ৪৩ করে ভারতীয় ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর দায়িত্বটা নিজের ২৫ বছর বয়সী কাঁধে তুলে নেন মাহমুদুল।
২ উইকেটে ১২৫ থেকে স্কোরটা ৫ উইকেটে ১৬৩ হয়ে যাওয়ার পর অধিনায়ককে যোগ্য সংগত দিয়েছেন তাপস ঘোষ। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনের ৮২ রানের জুটিতেই ম্যাচটা প্রায় হাতের মুঠোয় চলে আসে একাডেমির। কিন্তু পরপর দুটি এলবিডব্লু সিদ্ধান্ত, দুজনই ফেরেন আপত্তি জানিয়ে। ৩ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ৩৪ বলে ১৬ রান করার বুক ধড়ফড় করা মুহূর্ত এল এরপরই।
এর আগে আক্ষেপ নিয়ে শেষ হয়েছে আবাহনীর ইনিংস। প্রায় সব ব্যাটসম্যানই ভালো শুরুটাকে জলাঞ্জলি দিয়ে এসেছেন। শেষ ১০ ওভারে ৮২ রান এলেও শেষে তাই প্রমাণ হলো এই ব্যাটিং-স্বর্গে তিন শর কাছাকাছি রানও যথেষ্ট নয়।
দলের প্রথম জয়ে তাঁর অলরাউন্ড পারফরম্যান্সেরই বড় ভূমিকা, কিন্তু মাহমুদুল সেটাকে বড় করে দেখতে নারাজ, ‘কৃতিত্ব শুধু আমার একার নয়। দলের সবাই যার যার দায়িত্ব শতভাগ পালন করেছে বলেই এই আমরা জিতেছি।’
একাডেমি অধিনায়ক রাজি নন জয়টাকে অঘটন হিসেবে দেখতেও, ‘অঘটন কেন হবে! আজ (কাল) তো সব বিভাগেই আমরা ভালো খেলেছি। ম্যাচটা আমরা যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছি।’ প্রথমআলো