আমিন ইকবাল : আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি ছাড়া আনুগত্য পাওয়ার মতো আর কেউ নেই, তিনি বাদশাহ, অতি পবিত্র, শান্তির আধার, নিরাপত্তাদাতা, রক্ষক, সবার ওপর বিজয়ী, নিজ হুকুম প্রয়োগে পূর্ণ ক্ষমতাবান এবং প্রবল পরাক্রমশালী। সবকিছুর ওপর ক্ষমতাশালী এবং ক্ষমতার নিরঙ্কুশ মালিক। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন ইয়া আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর আর যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমান কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।’ [সুরা আল ইমরান : ২৬]
উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহতায়ালার সর্বময় ক্ষমতার প্রকৃতি বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ যাকে চান সাম্রাজ্য দান করেন আবার যার কাছ থেকে চান সাম্রাজ্য কেড়ে নেন। যাকে চান সম্মান দান করেন, আবার যাকে চান অপমানিত করেন, সব কল্যাণ তার কাছে। পবিত্র কোরাআনে কারিমের এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, বিভিন্ন রাজ শক্তির উত্থান-পতন আর সাম্রাজ্যের পট-পরিবর্তন হয়ে থাকে একমাত্র আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায়।
বর্ণিত আয়াতে জগতের বৈপ্লবিক ঘটনা সম্পর্কে অজ্ঞ এবং অতীতকালের শক্তিশালী জাতিগুলোর উত্থান-পতনের ইতিহাস সম্পর্কে উদাসীনদের হুঁশিয়ার করা হয়েছে। স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে, এ জগতের সব শক্তি ও রাষ্ট্রক্ষমতা একমাত্র আল্লাহতায়ালার করায়ত্ত। সম্মান ও অপমান তারই নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি দরিদ্র ও পথের ভিখারীকে রাজ সিংহাসন ও মুকুটের অধিকারী করতে পারেন এবং প্রবল প্রতাপান্বিত সম্রাটের হাত থেকে রাষ্ট্র ও ঐশ্বর্য ছিনিয়ে নিতে পারেন। এ আয়াতের শেষাংশেই বলা হয়েছে, আল্লাহর হাতেই যাবতীয় কল্যাণ। আয়াতের প্রথমাংশে রাজত্ব দান করা ও ছিনিয়ে নেয়া এবং সম্মান ও অপমান উভয়দিক উল্লেখ করা হয়েছিল।
এ কারণে এখানে খায়ের বা কল্যাণ শব্দ ব্যবহার করে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যে বিষয়কে কোনো ব্যক্তি বা জাতি অকল্যাণকর বা বিপজ্জনক মনে করে, তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অথবা জাতির জন্য আপাতদৃষ্টিতে অকল্যাণকর ও বিপজ্জনক মনে হলেও পরিণামের সামগ্রিক দিক দিয়ে তা অকল্যাণকর নাও হতে পারে। মোট কথা, আমরা যেসব বিষয়কে মন্দ বলি, সেগুলো পুরোপুরি মন্দ নয় আংশিক মন্দ মাত্র। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিনের দিকে সম্বন্ধ এবং সামগ্রিক উপযোগিতার দিক দিয়ে কোনো বস্তুই মন্দ নয়। আর এই বিশ্বাসই মুমিনের পথ চলার অবলম্বন ও ঈমানের দাবি।
বস্তুত রাষ্ট্র অর্জন এবং তা পরিচালনার ক্ষেত্রে যারা শক্তিকেই অবলম্বন মনে করেন, তারা স্পষ্ট ভুলের মধ্যে আছেন। কারণ ক্ষমতার জন্য রক্তপাত ও অত্যাচারকে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু মুসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহতায়ালা অত্যাচারীকে অবকাশ দেন (অর্থাৎ তাকে তৎক্ষণাৎ ধরেন না, ঢিল দেন, সুযোগ দেন যাতে সে আরও জুলুম করতে পারে)। এরপর তাকে এমনভাবে পাকড়াও করেন, সে আর ছুটে যেতে পারে না। এরপর নবী সা. আয়াত পাঠ করেন; অর্থাৎ এইরূপ তোমার প্রভুর পাকড়াও যে যখন তিনি অত্যাচারী গ্রামবাসীকে পাকড়াও করেনৃ। [বুখারি ও মুসলিম]
মোটকথা, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন, যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন। মূলত আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমতা দিয়ে পরীক্ষা করেন। কেউ এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সক্ষম হন, অনেকেই পারেন না। ক্ষমতার এই পালাবদলের মাঝে যারা বুদ্ধিমান, তাদের জন্য রয়েছে শিক্ষা।