ফারুক আলম : নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যান্দী এলাকার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত ও লাঞ্ছনার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দাবি তুলেছেন এ ঘটনার সঙ্গে সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমানসহ জড়িত অন্যদের ক্ষমা চাইতে হবে।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ওই শিক্ষকের জখম করার পর জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে কান ধরিয়ে উঠ-বস করা হয়, যা নিয়ে সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে।
শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের প্রতি সমব্যাথী বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্থানীয় সাংসদ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই এই চূড়ান্ত অসভ্যতা, বর্বরতা ও বে আইনি ঘটনাটি ঘটেছে।
বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোকে নিয়ে গঠিত এই ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের স্বাক্ষরে বিবৃতিটি আসে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের দাবি, শিক্ষা ও শিক্ষকের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করা হোক।
আমরা এরূপ জঘন্য ঘটনায় জড়িত সাংসদসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনারও আহ্বান জানাই। এর অন্যথা হলে শিক্ষক সমাজ তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যানদী গ্রামের স্কুলটিতে গত শুক্রবারের শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার ওই ভিডিওতে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে কান ধরে উঠ-বস করতে নির্দেশ দিতে দেখা যায়।
বন্দর আসনের সংসদ সদস্য সেলিম নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্য। তিনি বিকেএমইএর সভাপতি, পাশাপাশি তিনি নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজেরও সভাপতি।
তার ভাই এ কে এম শামীম ওসমান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। তাদের আরেক ভাই নাসিম ওসমানও সংসদ সদস্য ছিলেন। নাসিম মারা যাওয়ার পর ওই আসনে সংসদ সদস্য হন সেলিম।
শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় সেলিম ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই শিক্ষককে বিদ্যালয়ে মারধর করে ও অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। খবর শুনে তিনি গিয়ে ওই শিক্ষককে ‘উদ্ধার’ করেন।
আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে উত্তেজিত জনরোষ থেকে প্রাণে রক্ষা করে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। এলাকার লোকজনের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক স্বেচ্ছায় মাফ চেয়েছেন, কানে ধরেছেন।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, এমপির ভূমিকায় মনে হয়েছে, যেন তিনিই প্রধান শিক্ষক আর শ্যামল কান্তি তার দুষ্ট ছাত্র। শেষ পর্যন্ত কান ধরে ওঠবস করতে করতে সেই শিক্ষক জ্ঞান হারিয়েছেন। এখন তিনি হাসপাতালে। চিকিৎসা হয়ত তাকে শারীরিক স্বস্তি দেবে। কিন্তু তার মনের অবস্থাটা কী, তা সহজেই বোধগম্য।
সংসদ সদস্যের ভূমিকা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাকসুদ কামাল বলেন, তিনি (শিক্ষক) যদি কোনো অপরাধও করে থাকেন, তার জন্য দেশে প্রচলিত বিধান ও আইন আছে।
সাংসদের মতো একজন দায়িত্বশীল(!) ব্যক্তির কাছ থেকে এধরনের ঘৃন্য আচরণ আমাদের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জাতি তাকে আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়ার ক্ষমতা দেয়নি।