সাজ্জাদুল হক : আসন্ন রিও অলিম্পিক্সে ভারতের হয়ে কোন কুস্তিগীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা নিয়ে লড়াই গড়াল আদালতেও। যার একদিকে দেশের সবচেয়ে বেশি পদক-জেতা অভিজ্ঞ কুস্তিগীর, অন্য দিকে এক তরুণ তুর্কি! ভারতের সবচেয়ে সফল কুস্তিগীর সুশীল কুমার অলিম্পিকে লড়ার দাবি নিয়ে কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। কিন্তু দিল্লি হাইকোর্ট মঙ্গলবার এই বিবাদে নাক গলাতে অস্বীকার করেছে।
অলিম্পিকে ভারতের হয়ে দু’দুবার পদক জেতা সুশীল কুমারের করা এক আবেদনের পটভূমিতে দিল্লি হাইকোর্ট মঙ্গলবার বলেছে – ভারতের কোটাতে কে শেষ পর্যন্ত রিওতে যাবেন তা দেশের কুস্তি ফেডারেশনকেই ঠিক করতে হবে, আদালত এটা ঠিক করে দিতে পারবে না।
এই বিবাদের সূত্রপাত গত বছর, যখন কুস্তির ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভারতের হয়ে অলিম্পিকে একটি কোটা নিশ্চিত করেন তরুণ ভারতীয় কুস্তিগীর নরসিং যাদব। এর পর এ মাসের গোড়ায় যখন ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশন রিও অলিম্পিক্সের জন্য প্রস্তুতি শিবির শুরু করে, তখন সেই শিবিরে ৭৪ কেজি ফ্রিস্টাইল বিভাগের জন্য শুধু নরসিং যাদবকেই ডাকা হয়। কারণ দেশের জন্য অলিম্পিক কোটা তিনিই এনে দিয়েছেন।
এতে ভীষণভাবে আহত হন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল কুস্তিগীর সুশীল কুমার। যিনি লন্ডন অলিম্পিক্স থেকে রূপো আর বেজিং অলিম্পিক্স থেকে ব্রোঞ্জ পদক জিতে দেশকে এর আগে গর্বিত করেছেন। সুশীলের বক্তব্য ছিল এর আগে বহু আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদক জেতায় রিওতে তারই সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এবং অনভিজ্ঞ নরসিং যাদবের জায়গায় ভারতীয় দলে তারই সুযোগ পাওয়া উচিত। ‘অলিম্পিকে কে যাবে তা স্থির করার জন্য দুজনের মধ্যে সরাসরি একটা ‘ট্রায়ালে’র ব্যবস্থা করা উচিত’- সুশীল কুমার দেশের কুস্তি ফেডারেশনকে সেই আর্জিও জানান।কিন্তু তার সেই আবেদনে ফেডারেশন কর্ণপাত করেনি, তখন দুজনের মধ্যে ট্রায়াল করার আবেদন নিয়ে সুশীল কুমার প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়েরও দ্বারস্থ হন। কিন্তু ক্রীড়ামন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল এটা স্পষ্ট করে দেন যে এই বিষয়ে সরকার কোনও হস্তক্ষেপ করবে না।
এভাবে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সুশীল কুমার ও তার কোচ-তথা-শ্বশুর সতপাল সিং একযোগে সোমবার দিল্লি হাইকোর্টে একটি মামলা করেন। সতপাল সিং নিজেও ভারতের চ্যাম্পিয়ন কুস্তিগীর ছিলেন।
মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতেই দিল্লি হাইকোর্ট বলেছে যে তারা বিষয়টি দেশের কুস্তি ফেডারেশনের ওপরই ছেড়ে দিতে চান।
হাইকোর্টের বিচারপতি বলেন, ‘সুশীল কুমার ভারতকে যে অনেক সম্মান এনে দিয়েছে তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। কিন্তু একই সঙ্গে নরসিং যাদবের অবদানকেও ছোট করে দেখার কোনও উপায় নেই। কারণ মনে রাখতে হবে তিনিই কিন্তু ভারতকে অলিম্পিকে লড়ার যোগ্যতা এনে দিয়েছেন’।
অলিম্পিকে রেসলিং বা কুস্তির যে মোট ১৮টি ইভেন্ট আছে, তার মধ্যে মোট ৮টিতে ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা অর্জন করেছে। কিন্তু অলিম্পিক্সের নিয়ম অনুযায়ী, একটি ইভেন্টে একটি দেশের কেবল একজনই লড়তে পারবেন। এখন সুশীল কুমার ও নরসিং যাদব – দুজনেই ভারতের হয়ে লড়তে চাইছেন ৭৪ কেজি ফ্রিস্টাইল বিভাগে। তাদের মধ্যে কে শেষ পর্যন্ত রিও-র ফ্লাইট ধরতে পারবেন, তা নিয়ে এখনও ধন্দ কিন্তু রয়েই যাচ্ছে। বিবিসি বাংলা