ডেস্ক রিপোর্টঃ সিলেটের তারাপুর চা-বাগানে গড়ে তুলা ‘সম্রাজ্য’থেকে বিতাড়িত হয়েছেন ধনকুবের রাগীব আলী। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসন শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ আখড়ার সেবায়েত পংকজ গুপ্তের হাতে তুলে দেবোত্তর এ সম্পত্তি।
তবে দীর্ঘ ২৮ বছর পর পংকজ কুমার গুপ্ত দুই হাজার কোটি টাকা মূল্যের এ ভূ-সম্পত্তির দখল পেলেও তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। বাগানের বাংলোও ছেড়ে দেয়া হয়নি এখনো। তাছাড়া আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাগানের হিসাবে অর্থও জমা দেননি রাগীব আলী। উল্টো তিনি ফ্যাক্টরির সব মেশিনপত্র খুলে নিয়েছেন। ফলে বাগান ও ফ্যাক্টরি সচল রাখতে সমস্যায় পড়েছেন পংকজ গুপ্ত।
টিলাঘেরা ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা তারাপুর বাগানের পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯১৫ সালে ওই বাগানের তৎকালীন মালিক বৈকুণ্ঠ চন্দ্র গুপ্ত শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউ আখড়ার নামে বাগানটি দান করেন। জালিয়াতির মাধ্যমে ১৯৯০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নিজের ছেলে আব্দুল হাইয়ের নামে বাগানটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেন রাগীব আলী।
পরে বাগানের একটি অংশে রাগীব আলী গড়ে তুলেন স্ত্রী ও নিজ নামে মেডিকেল কলেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠা। বিপুল পরিমাণ জায়গা প্লটাকারে বিক্রি করেন বিভিন্ন পেশার লোকজনের কাছে। ইতোমধ্যে ওই ওইসব প্লটে ৩৫৭টি পরিবার বসতি গড়েছে। বাসা-বাড়ি গড়ে তুলার পাশাপাশি অনেকে নির্মাণ করেছেন দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
দীর্ঘদিন ধরে চলা মামলার বিচারকাজ শেষে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিমকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ঐতিহাসিক রায় দেন। রায়ে দেবোত্তর ওই সম্পত্তি সেবায়েত পংকজ গুপ্তকে সমঝে দেওয়ার জন্য বলা হয়। একই সাথে রায়ের ছয় মাসের মধ্যেই সব স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয় রাগীব আলীকে। বাগানের হিসাবে জমা দিতে হয় ৩০ লাখ টাকা।
আদালতের নির্দেশ মতো রবিবার জেলা প্রশাসন তারাপুর বাগান তথা দেবোত্তর সম্পত্তি পংকজ গুপ্তের হাতে তুলে দেয়। তবে এরই মধ্যে রায়ের পর প্রায় তিন মাস কেটে গেছে। অর্থাৎ আগামী তিন মাসের মধ্যে সবকিছু বুঝিয়ে দিতে হবে সেবায়েতকে। কিন্তু রবিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেবোত্তর সম্পত্তি পংকজকে সমঝে দেওয়া হলেও এখনো তিনি সম্পত্তির প্রয়োজনীয় অনেক কাগজপত্র হাতে পাননি। ছেড়ে দেয়া হয়নি বাগানের বাংলো। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাগানের হিসাবে অর্থও জমা দেননি রাগীব আলী। উল্টো ফ্যাক্টরির সব মেশিনপত্র খুলে নিয়েছেন তিনি। অফিসের সব আসবাবপত্রও নিয়ে যান রাগীব আলীর লোকজন। এ অবস্থায় বাগান ও ফ্যাক্টরি চালু রাখার ব্যাপারে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পংকজ গুপ্ত।
রবিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়ার পর সোমবার সকালে তারাপুর চা বাগানে যান পংকজ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করেন তিনি। কিন্তু ম্যানেজার না থাকায় বাগানের কাগজপত্র বুঝে পাননি। বেলা ২টা পর্যন্ত বাগানে অবস্থান করে পংকজ সেখানে কর্মরতদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। বিকেলে তিনি জেলা প্রশাসকের দফতরে গিয়ে সার্বিক অবস্থা জানান।
জানা গেছে, পংকজ গুপ্ত বাগানকে সচল রাখা এবং দেবতার মন্দিরকে স্ব স্থানে পুন:প্রতিষ্ঠা করার জন্য উদ্যোগে নিয়েছেন। এজন্য মন্দিরের কিছু সংস্কার কাজের জন্যও নির্দেশ দিয়েছি তিনি। তবে বাগানের বাংলোতে রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বসবাস করায় এখন বাংলোটি তিনি ব্যবহার করতে পারছেন না। তাছাড়া সোমবার পর্যন্ত রাগীব আলী আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ৩০ লাখ টাকা জমা দেননি বলেও জানা গেছে। ফলে বাগানের মেশিনসহ আসবাবপত্র ক্রয়, সংস্কার কাজ এবং শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পংকজ।