শায়েখ হাসান : সিলেট একটি প্রবাসীবহুল জনপদ। এই অঞ্চলের প্রবাসীরা দেশের পাশাপাশি বিদেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে। সরকার পরিকল্পনা করছে, এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সার্কুলেশন দেশ কেন্দ্রিক করাতে। একই সঙ্গে, দেশে সিলেটি প্রবাসীদের বিনিয়োগ আশা করছে সরকার।
এজন্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য কাজে লাগানো এবং এই অঞ্চলে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এতে সিলেটের প্রবাসীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে বিনিয়োগ হবে। এছাড়া প্রবাসীদের মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগেরও সম্ভাবনা তৈরি হবে।
আশা করা হচ্ছে, ২০১৮ সাল নাগাদ অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে। এর ফলে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে। এতে সিলেটের মানুষের বিদেশ যাবার প্রবণতা কমার পাশাপাশি অনেক প্রবাসীও এগিয়ে আসবেন এখানে বিনিয়োগে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, দেশের চায়ের রাজধানী বলা হয় সিলেটকে। একই সঙ্গে সিলেট গ্যাস সমৃদ্ধ জনপথ। সরকার এই অঞ্চলের এসব বৈশিষ্ট্যকেও কাজে লাগাতে চায়।
এদিকে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ব্যয়-সম্পর্কিত তথ্য জানতে জরিপ পরিচালনা করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ‘প্রবাস আয়ের বিনিয়োগ-সম্পর্কিত জরিপ ২০১৬’ শীর্ষক এই জরিপের মাধ্যমে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ ব্যবহারের বিভিন্ন খাত সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। যার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাকৃতিক সম্পদে এই জেলা অনেক বেশী সমৃদ্ধ হলেও এখনো গড়ে ওঠেনি তেমন কোন শিল্প-কারখানা। ফলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রিটেনেই এ পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ সিলেটী কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিলেট বিভাগের মানুষের বসবাস রয়েছে। এসব প্রবাসীর বিপুল টাকা ব্যাংকেই অলস পড়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এশিয়া ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা যায়, সিলেটের প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের সাড়ে ৫২ শতাংশ ঘর-বাড়ি নির্মাণে এবং সাড়ে ১৩ শতাংশ কৃষি জমি কেনার মতো অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হচ্ছে। আর ১২ শতাংশ অকৃষি ও ব্যবসায়িক খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে।
বিবিএসের তথ্য মতে, প্রবাস আয়-সম্পর্কিত সর্বশেষ জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, দেশে আয়ের ৭৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ টাকা জমি ক্রয়ে ব্যবহার হয়েছে। অথচ সিলেট বিভাগে মাত্র ৬২ দশমিক ৭০ শতাংশ টাকা জমি ক্রয়ে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ এই অঞ্চলের মানুষ দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় কম জমি কেনে।
তবে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণার পরপরই পাল্টাতে থাকে সিলেটের চিত্র। এখন অনেক প্রবাসী সিলেটী ফিরে আসছেন বিনিয়োগ করতে। উদ্যোক্তারা আশা করছেন এবার ঘুরে দাঁড়াবে সিলেট। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা)পরিকল্পনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, সিলেটের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট না করে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো এমনভাবে তৈরি হবে যেন তা দর্শনীয় হবার পাশাপাশি বাড়ে কর্মসংস্থান, বাড়ে রপ্তানি।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে অঞ্চলটির ভূমি উন্নয়ন, গ্যাস সরবরাহ, বিদুৎ সংযোগ ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।