আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরাকের সরকারি বাহিনী গতকাল সোমবার দেশটিতে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নিয়ন্ত্রণ করা ফালুজা শহরে প্রবেশের পর ‘চূড়ান্ত আক্রমণ’ শুরু করেছে।
ইরাকের সেনাবাহিনী জানায়, ফালুজায় আইএসের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছে তারা। এর মধ্যেই রাজধানী বাগদাদের তিন জেলায় বোমা হামলায় অন্তত ২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। অনলাইনে বিবৃতি দিয়ে এর দায় স্বীকার করেছে আইএস।
এদিকে, ফালুজায় আঘাত শুরুর আগে সেখান থেকে পালাতে পেরেছে কেবল কয়েক শ পরিবার। ফালুজার ভেতরে প্রায় ৫০ হাজার বেসামরিক লোক আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইরাকের রাজধানী বাগদাদের ৩০ মাইল পশ্চিমের গুরুত্বপূর্ণ শহর ফালুজা ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে আইএসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শহরটি পুনর্দখল নিতে ইরাকের সরকার এক সপ্তাহ আগে সমন্বিত একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে।
ফালুজা পুনর্দখলের অভিযানে প্রথম দিকে শহরটির আশপাশের গ্রামীণ এলাকা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিল ইরাকি বাহিনী। ক্রমশ তাদের মনোযোগ শহরের কেন্দ্রের দিকে এগোয়। সরকারি এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের সদস্যসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনী কয়েক দিক দিয়ে ফালুজার দিকে এগোচ্ছে। জানা গেছে, আইএসের যোদ্ধারাও আত্মঘাতী ও গাড়িবোমা হামলার মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছে। বাগদাদে নিযুক্ত বিবিসির সংবা“াতা জিম মিউর বলেন, আগে ফালুজা শহরের বাইরে আইএসের প্রতিরোধ সামাল দিচ্ছিল সরকারি বাহিনী। আর এখন সেনাবাহিনী বলছে, তারা তাদের লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
ফালুজা অভিযানের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদেল ওয়াহাব আল-সাদি বলেন, ‘আমাদের আন্তর্জাতিক জোট, ইরাকি বিমানবাহিনী ও সামরিক বিমান আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে গোলন্দাজ বাহিনী ও ট্যাংকের সহায়তায় ইরাকি বাহিনীর সদস্যরা ফালুজায় প্রবেশ করেছেন।ৃসন্ত্রাসবিরোধী বাহিনী সিটিএস, আনবারের (প্রাদেশিক) পুলিশ ও ইরাকি সেনাবাহিনী স্থানীয় সময় সোমবার ভোর চারটায় তিন দিক দিয়ে ফালুজায় প্রবেশ শুরু করে। দায়েস (আইএস) থেকেও এর প্রতিরোধ আসছে।’
উল্লেখ্য, আইএসের উত্থান এবং ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ‘খেলাফত’ কায়েম করার পেছনে ফালুজা শহর আইএসের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। এ ছাড়া দেশটির মসুল শহর এখনো আইএসের দখলে। ধারণা করা হয়, ফালুজায় আইএসের প্রায় এক হাজার জঙ্গি লুকিয়ে রয়েছে। আর সে কারণেই ফালুজায় ইরাকি বাহিনী শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারে। তবে কয়েক মাস ধরে শহরটি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকায় ঠিক কীভাবে আইএস সেখানে প্রতিরোধ গড়ছে, তা পরিষ্কার নয়। এ ছাড়া বিগত বছরে ধারাবাহিকভাবে আইএস ভূখ- হারানোয় সাম্প্রতিক সময়ে আইএসকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল বলে মনে করা হচ্ছে। ফালুজায় আটকে পড়া বেসামরিক লোকদের আইএস যদি-না মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, পরিস্থিতি ইরাকি বাহিনীর পক্ষেই থাকবে বলে ইঙ্গিত মিলছে।
তবে অভিযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত আইএস-বিরোধী নেতারা বলছেন, শহরটির কেন্দ্রে আক্রমণ শুরুর আগে বেসামরিক লোকদের পালানোর সুযোগ দিতে একটা বিরতি দেওয়া হতে পারে। কারণ, সেখানে লোকজন তীব্র মানবিক সংকটে রয়েছেন।