সারীফা রিমু : আদরের সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগে থেকেই তাকে ঘিরে কতোনা জল্পনা-কল্পনা কতো কি স্বপ্ন বুনা বাবা-মায়ের। কিন্তু সে-সব স্বপ্ন পূরণের উপযুক্ত পরিবেশ কি তৈরি করতে পারছি আমরা। দূষিত পরিবেশ ,খাবারে ভেজাল আর বৈষম্যের কারণে গর্ভে থাকতেই অপুষ্টির শিকার হচ্ছে তারা। ফলে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে জন্মগত ত্রুটি নিয়ে শিশু জন্মের হার।
বিশ্ব জরিপে শিশু মৃত্যুর হার কমলেও জন্মের আগে পরে নানান রোগ নিয়ে হাসপাতালে আশ্রয় ৬২ ভাগ শিশুর। তাদের ৮০ ভাগ আবার ভুগছে রক্ত স্বল্পতায়। গ্রাম বা শহরে শিশু বা নবজাতকের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা খুবই কম। তার উপর আবার ভুল চিকিৎসার অজস্র অভিযোগ। আর তাই জন্মের পর শিশুর প্রথম ধাক্কাটাই স্বাস্থ্য সেবা।
এদিকে আবার মমত্ববোধের ঘাটতি না থাকলেও স্বাস্থ্য পরিচর্যাসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণে পিছিয়ে গ্রামের মায়েরা। যেখানে মৌলিক সুবিধার ঘাটতি পদে পদে।
এর বিরল আকার ধারণ করেছে যেনো বৃহত্তর চট্টগ্রামে। দারিদ্র্যতার পাশাপাশি নানা অনিয়ম এবং অসচেতনতার কারণে জন্মগত ত্রুটি নিয়ে শিশু জন্মের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে এ অঞ্চলে । প্রতিদিনই জন্মের সময় মারা যাচ্ছে এ ধরণের একাধিক শিশু। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে গত সাত বছরে এধরণের অন্তত ১০ হাজার রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে খাদ্যনালী এবং কিডনি সংক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সাত বছরে ১০ হাজার শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে যাদের সবারই জন্মগত নানা ত্রুটি রয়েছে । এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাদ্যনালী ত্রুটি সংক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার । এছাড়া কিডনি এবং মূত্রনালি সংক্রান্ত রোগী আড়াই হাজারের বেশি। আর রক্তনালী সংক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজারের ওপরে।
চমেকেরে শিশু সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. তাহমিনা বানু বলেন, ‘২০০৮ সালে আমাদের জন্মগত ত্রুটি যা ছিল ২০১৫ সালে দেখা গেল তার চেয়ে অনেক বেশি। যত রোগী আসছে তার অর্ধেকই জন্মগত ত্রুটি নিয়ে আসছে।’
একে তো সদ্য জন্ম নেয়া শিশু,তার ওপর জন্মগত ত্রুটি । এসব স্পর্শকাতর রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় নানা সমস্যায় পড়তে হয় চিকিৎসকদের। এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে দারিদ্র্যতার পাশাপাশি রয়েছে সচেতনতার অভাব। সেই সাথে ভেজাল খাদ্য গ্রহণ জন্মগত ত্রুটি নিয়ে শিশু জন্মের হার বাড়ার এগুলো অন্যতম কারণ বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, মাতৃত্বকালীন সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকা, নিয়মিত গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রক্ত সম্পর্কীয় বিবাহ প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই।